শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও আস্থার সংকট পুলিশের কর্মকান্ডে

ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে নজরদারি করছে ২০ জনের টিম ষ মামলায় বেশি অসন্তোষ লালবাগ বিভাগে কম মিরপুরে ষ জিডিতে অসন্তোষ বেশি গুলশানে কম তেজগাঁওয়ে
সাখাওয়াত হোসেন ও তানভীর হাসান
  ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

থানা পুলিশের সেবা পেতে হয়রানি-ভোগান্তির অভিযোগ এবং উৎকোচ গ্রহণের দুর্নাম ঘোঁচাতে গত কয়েক বছর দফায় দফায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংকট কাটেনি। বরং কোনো কোনো থানায় মামলা-জিডি গ্রহণ ও তদন্ত নিয়ে ভিকটিমের অসন্তোষ বেড়েছে। ফলে থানা পুলিশের কাছ থেকে নিয়মমাফিক সেবা পাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট রয়ে গেছে। খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশের পর্যালোচনাতেই এ চিত্র উঠে এসেছে।

ডিএমপি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মামলার ক্ষেত্রে ১৩ ভাগ এবং জিডির ক্ষেত্রে ৫ ভাগ ভিকটিম থানা পুলিশের সেবায় অসন্তুষ্ট। গত সেপ্টেম্বর মাসে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় রুজুকৃত ৭৮৪টি মামলা এবং ৪ হাজার ৪৮৪টি জিডির বাদীর বক্তব্য বিশ্লেষণে ডিএমপি এ পরিসংখ্যান চিত্র তৈরি করেছে। যদিও গত বছর এ চিত্র ছিল আরও উদ্বেগজনক। ওই সময় ঢাকা মহানগরীর থানাগুলোতে জিডির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং মামলার ক্ষেত্রে প্রায় ২০ শতাংশ ভিকটিম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে ডিএমপি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রতি মাসের অপরাধ সভায় ডিএমপির সব থানার মামলা-জিডিসহ সার্বিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশের সেবা গ্রহণকারী ভিকটিমদের সন্তোষ-অসন্তোষের তুলনামূলক চিত্র গ্রাফ আকারে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ডিএমপি সদর দপ্তরের তৈরি এ পরিসংখ্যান চিত্র যায়যায়দিনের হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, মামলার ক্ষেত্রে গত সেপ্টেম্বরে গড়ে ৮৭ দশমিক ১২ ভাগ বাদী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ১২ দশমিক ৮৮ ভাগ বাদী। এর মধ্যে লালবাগ বিভাগে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাদী থানা পুলিশের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এই বিভাগে অসন্তোষের হার ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। লালবাগ বিভাগে গত মাসে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলার বাদীদের মধ্যে ৫৩ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএমপি সদর দপ্তর। এদের মধ্যে পুলিশি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ১৪ জন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম অসন্তোষ ছিল মিরপুর বিভাগে। সেখানে অসন্তোষের

হার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এই বিভাগে যেসব মামলা হয়েছে এর মধ্যে ১১৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএমপি সদর দফতর। এদের মধ্যে নয়জন বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া রমনা বিভাগে ১০ দশমিক ৬৪, মতিঝিলে ১৬ দশমিক ২৩, ওয়ারী বিভাগে ১৯ দশমিক ৫৭, তেজগাঁওয়ে ৮ দশমিক ২২ ভাগ, গুলশানে ৯ দশমিক ৮২ এবং উত্তরা বিভাগে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগের অধীনে ৫০টি থানায় মোট মামলা হয় ৮২৩টি। এসব মামলার মধ্যে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে ৭৮৪টি মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এদের মধ্যে থানা থেকে প্রাপ্ত সেবায় ১০১ জন অসন্তোষ এবং ৬৮৩ জন বাদী সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। এ বিভাগের মামলার সংখ্যা ১৪৭টি। একই মাসে সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে লালবাগ এবং উত্তরা বিভাগে। এই দুই বিভাগে মামলার সংখ্যা ছিল ৬৪টি করে। এছাড়া রমনা বিভাগে ৫৬, মতিঝিলে ১২০, ওয়ারীত ১৩৮, মিরপুরে ১১৮ এবং গুলশানে ১১৬টি করে মামলা হয়।

জিডির ক্ষেত্রে গত সেপ্টেম্বরে চার হাজার ৮৮৪ জন বাদীর অভিমত গ্রহণ করে ডিএমপি সদর দপ্তর। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ২৭৭ জন জিডির বাদী অসন্তোষ এবং ২০৮ জন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ হিসাবে ৯৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বাদী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৪ দশমিক ৬২ ভাগ বাদী। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ গুলশান বিভাগে। এই বিভাগে অসন্তোষের হার ৮ দশমিক ৩০ ভাগ। গুলশান বিভাগে গত মাসে যেসংখ্যক জিডি হয়েছে এর মধ্যে ৫৬৮ জন জিডির বাদীর সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপি সদর দপ্তর। তাদের মধ্যে ৪৪১ জন সন্তোষ প্রকাশ করলেও ২৭ জন অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে জিডির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মাসে সবচেয়ে কম অসন্তোষ ছিল তেজগাঁও বিভাগে। এখানে অসন্তোষের হার ৩ দশশিক ২৫ ভাগ। এই বিভাগের জিডিকারীদের মধ্যে ৫৮৬ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএমপি সদর দপ্তর। এদের মধ্যে ১৯ জন অসন্তোষ প্রকাশ করে। এছাড়া রমনা বিভাগে ৫ দশমিক ৪২, মতিঝিলে ৩ দশমিক ৮৭, লালবাগ বিভাগে ৪ দশমিক ৩৫, ওয়ারীতে ৫ দশমিক ২৫, মিরপুরে ৪ দশমিক ৬৭ ভাগ এবং উত্তরা বিভাগে ৭ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ জিডির বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে ডিএমপি সদর দপ্তরের পর্যবেক্ষণে জানা যায়।

ডিএমপি সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে একটি সূত্র জানায়, উত্তরা বিভাগে ৫৮৬ জন জিডির বাদীর মধ্যে ৩১ জন অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রমনা বিভাগে ৫৭১ জন জিডির বাদীর মধ্যে ৩১ জন পুলিশি সেবায় অসন্তুষ্ট। এছাড়া মতিঝিলে ৫৬৯ জনের মধ্যে ২২ জন, লালবাগে ৪৩৬ জনের মধ্যে ১৯ জন, ওয়ারীতে ৫৯০ জনের মধ্যে ৩১ জন এবং মিরপুরে ৫৭৮ জনের মধ্যে ২৭ জন থানা পুলিশের সেবায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, থানায় সেবার মান বাড়ানো এবং পুলিশের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কেবল পুলিশ কমিশনারের একার ভূমিকা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে টপ টু বটম সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। থানায় সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না হলেও তিনি এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান।

কমিশনার জানান, থানায় মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একাধিকবার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মামলা গ্রহণ, তদন্ত বা আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কোনো গাফিলতি আছে কিনা, থানা পুলিশের কেউ কোনো ধরনের উৎকোচ দাবি করেছেন কিনা এ ব্যাপারে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খোঁজ নেন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, থানা পুলিশের জবাবদিহিতা বাড়াতে একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের (এডিসি) নেতৃত্বে ডিএমপি সদর দপ্তরে ২০ জনের একটি চৌকষ টিম নিয়মিত কাজ করছে। এছাড়া একজন এডিসির নেতৃত্বে প্রতিটি অপরাধ বিভাগে পৃথক টিম রয়েছে। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট টিম তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ভিকটিমের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় এর মধ্যে ৬ জন ওসি এবং ২০ জন এসআই ও এএসআইকে শো'কজ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন জানান, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিসি, এডিসি (অতিরিক্তি উপকমিশনার) এবং এসি (সহকারী কমিশনার) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা থানা পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম সুনিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশেষ করে ভিকটিকদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে থানা পুলিশ কী ভূমিকা নিচ্ছে, তা তারা কঠোরভাবে নজর রাখছেন। এসব কারণে থানায় সেবার মান বেড়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<117264 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1