ঠাকুরগাঁও

হালকা শীতে গরম কাপড়

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

জাকির মোস্তাফিজ মিলু
ভোরে দেখা যায় হালকা কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে রাস্তাঘাট। ধানগাছের আগায় জড়িয়ে রয়েছে মুক্তার মতো শিশিরবিন্দু। ভোরে ও রাত গভীর হলে হালকা গরম কাপড় গায়ে মুড়িয়ে রাখতে হয়। আর ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আভা হালকা লালচে রঙের ঝিলিক দিচ্ছে। এসব দৃশ্যই বলে দিচ্ছে শীত আসছে এ জনপদে। করোনাভাইরাসে বিশ্বের কাঁপন এখনো বন্ধ হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শীতে করোনার বিস্তার ঘটবে। একই বক্তব্যের অনুরণন শোনা গেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও। এই সতর্কতা শীত আসার \হআগেই সবার মাঝে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। পঞ্জিকার হিসাবে হাড়কাঁপানো শীতের পূর্ণ আগমন ঘটতে এখনো মাসখানেক বাকি। তবে কি করোনার দ্বিতীয় থাবার জন্যই এবার অনেক আগেই দরজায় শীত কড়া নাড়তে শুরু করেছে? এ প্রশ্ন উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওবাসীর। শরৎকাল বিদায় নিয়েছে প্রায় ১২ দিন। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে হেমন্ত ঋতুর যাত্রা। পুঁথিগত ধারণায় হেমন্তের শেষে শীত। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রকৃতির রূপ পাল্টে দিচ্ছে। দেড় মাস পর নয় শরতের বিদায় এবং হেমন্তের শুরুতে শীত তার আগমনের খবর দিতে শুরু করেছে। হেমন্তের সূচনায় শীতের ছবি বলছে প্রকৃতি এতদিনের নিয়মে নিজ থেকেই নানা পরিবর্তন আনছে। দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও এক সময় 'নিশ্চিন্তপুর' নামে পরিচিত ছিল। এই নামটি মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনো গ্রাম অথবা জনপদের ছবি। কিংবা মনে পড়ে যায় বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের 'নিশ্চিন্দিপুর' গ্রামের কথা। যদিও অনেকদিন আগেই চাপা পড়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই 'নিশ্চিন্তপুর' নামটি। জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট বলছে, কয়েকজন বিত্তশালী মানুষের খেয়ালি ইচ্ছাকে পূরণ করতে সাধারণের প্রিয় জনপদ নিশ্চিন্তপুরকে পাল্টে করা হয় ঠাকুরগাঁও। আর এ ইতিহাস অজানা রয়েছে বলে 'নিশ্চিন্তপুর' শব্দটি উচ্চারিত হলে কখনো ঠাকুরগাঁওয়ের কথা মনে হয় না। তবে ইতিহাস-সচেতন মানুষ আজও আবেগ শিহরিত হৃদয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সঙ্গে নিশ্চিন্তপুরের কথা মনে করেন। সেই ঠাকুরগাঁও জেলায় এখন মধ্যরাতের পর থেকে হালকা শীতল হয়ে উঠছে। তবে পূর্বদিকে লাল আভা দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর কিছুটা উষ্ণতা পাওয়া যায়। হালকা ঠান্ডার সঙ্গে ভোরবেলা পড়তে শুরু করেছে হালকা কুয়াশা। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঠাকুরগাঁও জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার কার্তিকেও আগাম বাজিয়ে দিয়েছে ঘণ্টাধ্বনি। ভোরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা রয়েছে রাস্তঘাট। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে চলতি বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশায় আস্তে আস্তে দৃষ্টিসীমা সংকুচিত হয়। রাতভর হালকা বৃষ্টির মতো টুপটাপ করে কুয়াশা ঝরতে থাকে। শহর ও শহরতলি ছাড়িয়ে গ্রামগুলোতে দেখা গেছে, পুরানো কাঁথা নতুন করে সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে নানা রঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন শীতের কাঁথা। সবজিচাষি কাসেম জানালেন, অসময়ে হালকা শীতের কারণে ফসলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ শুরু করেছে। ফসল রক্ষায় এখন কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প পথ নেই। সাধারণত কার্তিক মাসে এমনটি হয় না। কীটনাশকের জন্য এখন উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার শাহাবুদ্দিনের মতে, গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে এবার অনেক আগেই শীত অনুভব হচ্ছে। বাসচালক আইনালের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গত বছর এমন সময় কোনো কুয়াশা দেখা যায়নি। গত দুই দিন ধরে সকালে বাস নিয়ে বের হওয়ার সময় হেডলাইড জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। শীত নিয়ে চিন্তিত মোহাম্মদপুর গ্রামের বয়স্ক খলিলুর রহমান ও খয়রুন উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, 'এবার হামার যে কী হবে। করোনা আইচ্ছে, আবার শীত হামরা খামো কী পড়িমো কী হে আলস্নাহ হামারতি দেখ।' ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে উঁচুনিচু জমিতে পানি জমেছে। সবজি চাষে বৃষ্টির পানি ও শীতের কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দেখা দিতে পারে। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মীরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম জানান, স্বাস্থ্য নিয়ে সবাইকে সচেতন করার কাজ চলছে। হাসপাতালে শীতের জন্য আরও ৫০টি বেড বৃদ্ধিসহ স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ শীতে করোনা সংক্রমণের ভয় রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ডা. এ বি এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, 'এ জেলা শীতপ্রধান হওয়ায় গত বছর থেকে আমরা কম্বলের পাশাপাশি বয়স্ক ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে লেপ বিতরণ শুরু করেছিলাম। এ বছর লেপের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাধারণ শীত মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলেও এবার শীতের সঙ্গে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনও সব প্রস্তুতি নিয়েছে।