লালমনিরহাট

বইতে শুরু করেছে শীতল হাওয়া

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

তৌহিদুল ইসলাম লিটন
লালমনিরহাটে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত আর হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় লালমনিরহাটে বরাবরই শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। হেমন্তের শুরুতেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে। ভোর হতেই কুয়াশা আর শীতের চাদরে ঢাকা পড়ছে মেঘ। মধ্যরাত থেকে কুয়াশা পড়া শুরু হয়ে চলে সকাল পর্যন্ত। শীত আর কুয়াশাকে মোকাবিলা করে টিকে থাকার লড়াইয়ে লোকজনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে নিম্নআয়ের লোকজন। এদিকে এবারের শীত মৌসুমে করোনার প্রভাব বাড়তে পারে। তাই লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ও ভীতি বিরাজ করছে। লালমনিরহাট জেলার ওপর দিয়ে তিস্তা, ধরলা ছাড়াও ছোট-বড় আরও ১০টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীবেষ্টিত এলাকার মধ্যে ৭০টি চরাঞ্চল রয়েছে। সেখানেও বসবাস রয়েছে ২ লক্ষাধিক মানুষের। এসব নিম্নআয়ের মানুষ নদীপাড়ের আবহাওয়া, বন্যা আর খরা মোকাবিলা করে জীবন কাটায়। প্রচন্ড শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ দিয়ে শীত নিবারণ করতে হয় তাদের। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে লালমনিরহাটে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ সময় মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। ভারী কুয়াশায় কর্মজীবী ও দিনমজুররা কাজে বের হতে পারে না। পরিবারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। শীত মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই এলাকায় শীতের তীব্রতার কারণে প্রচন্ড ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানিসহ নানারকম শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এ সময়। শীতজনিত কারণে মৃতু্যর সংখ্যাও কম নয় এখানে। গত ১০ বছরে দেখা গেছে, শীত ও অতিরিক্ত ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে ২ শতাধিক মানুষের মৃতু্য হয়েছে। যার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় লালমনিরহাটে শীতের প্রকোপও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শীত মোকাবিলায় শহরবাসীর প্রস্তুতি থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলের লোকজনের প্রস্তুতি নেই। তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল মহিষখোঁচা, রাজপুর, চর বোয়ালমারী, পাটিকাপাড়া চরের বাসিন্দা ফজলুল হক, মোবারক আলী, ইলিয়াস হোসেন, শরিফা বেগম জানান, গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন তারা। তারা জানান, গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় সাহায্যের আশায় থাকেন। কিন্তু সরকারিভাবে কম্বল দেওয়া হলেও অধিকাংশ চরবাসীই তা পায় না। চরাঞ্চলবেষ্টিত মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক চৌধুরী জানান, অন্য এলাকার তুলনায় নদীপাড়গুলোতে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। এসব এলাকার মানুষদের তালিকা করা আছে। শীত নিবারণের জন্য সাধ্যমতো সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত সহায়তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে শীতের মাত্রা বেশি হবে। একইসঙ্গে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় এবার শীতের প্রস্তুতি বেশি নেওয়া হয়েছে। পুরো শীতকালে চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৫টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান, করোনা ও শীতকে মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ সহায়তা প্রদানসহ শীতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হবে। তাছাড়া শীতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালনে সচেতনতামূলক প্রচারণা, মাক্স বিতরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।