সবাই মিলে চেষ্টা করলে দেশে দরিদ্র থাকবে না :প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত হন -ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু নিজে ভালো থাকব, সুন্দর ও আরাম আয়েশে থাকব। আর আমার দেশের মানুষ, এলাকার মানুষ কষ্টে থাকবে, এটাতো মানবতা না, এটাতো হয় না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে দেশে আর কোনো দরিদ্র থাকবে না। 'মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষকে সরকারের সচিবগণের গৃহ উপহার' কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) প্রান্তে যুক্ত হন তিনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মুজিববর্ষে দেশের সব গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার সরকারের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৮০ জন সচিব নিজ নিজ এলাকায় ১৬০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এমন উদ্যোগের জন্য সচিবগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন, একটা ঘর করে দিয়েছেন, একটা মহৎ কাজ আপনারা করেছেন। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে মানুষজন আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে এবং মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী এবং এই মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা বাংলাদেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও \হআজকে নিজ নিজ এলাকার দরিদ্র অসহায় মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে সচিবরাও সরকারি এই উদ্যোগে শরিক হয়েছেন এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় দুইটি করে ঘর করে দিয়েছেন। এই ঘর দেওয়ার পর দুঃখী মানুষের মনে যে আনন্দটা আসবে, আমি মনে করি এটাই সব থেকে বড় পাওয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দেওয়া এবং ভূমিহীনকে খাসজমি প্রদানে জাতির পিতার 'গুচ্ছগ্রাম' প্রকল্পের স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে নোয়াখালী যান (এখন লক্ষ্ণীপুর তখন সেটা মহকুমা ছিল) এবং সেখানেই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ভিত্তি রচনা করেন। তার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ওপরই এই দায়িত্ব ছিল এবং তিনি সেখানে ঘর তৈরি করে দিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু সে সময়ই প্রাথমিক শিক্ষা এবং মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেন এবং সমব্যয়ের মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগও নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে জেলা গভর্নর নিযুক্ত করে দেন। জাতির পিতার 'গুচ্ছগ্রাম' প্রকল্পের অনুকরণে তার সরকার 'আশ্রয়ণ', 'ঘরে ফেরা' এবং 'আমার বাড়ি আমার খামার' কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার বস্তিবাসী যদি নিজ গ্রামে ফিরে যায় তাহলে তাদের সরকারের টাকায় ঘর করে দেওয়া, খাবারের ব্যবস্থা এবং টাকা পয়সা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ প্রত্যেকে যেন নিজে কিছু করে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারেন, কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়। গ্রামীণ জনগণকে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রত্যেক ঘরে বিদু্যৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর যেন আলোকিত হয় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিত্তবানদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা বিত্তশালী তারা নিজ নিজ এলাকায় প্রতেকেই যদি দুস্থদের দিকে যেন ফিরে তাকান। গৃহহীনকে ঘর করে দেন বা তাদের কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করে দেন। পেশাজীবী বলেন বা ব্যবসায়ী বলেন বা যে যেখানেই আছেন প্রত্যেকের কাছেই আমার অনুরোধ থাকবে, যে যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং যে গ্রামে জন্মেছেন তার উন্নয়নে যেন সহযোগিতা করেন। দেশের মানুষের কল্যাণে জাতির পিতার অবদান উলেস্নখ করে তার কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি জীবনে অনেক কিছু করতে পারতেন। তারপরেও দুঃখী মানুষের কথা ভেবেই তিনি সে পথ বেছে নেননি। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তিনি (জাতির পিতা) ছোটবেলা থেকেই নিজ চোখে দেখেছেন। যে কারণে তার সবসময় একটা উদ্যোগই ছিল- মানুষের জন্য কিছু করার। বাংলার নিপীড়িত, বঞ্চিত জনগণের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা ও দারিদ্র্যের কশাঘাত দেখে জাতির পিতার প্রাণ কেঁদে উঠত। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পর জনগণকে উন্নত-সুন্দর জীবন দেওয়াই বঙ্গবন্ধুর অন্যতম লক্ষ্য ছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলাও 'জাতির পিতার চিন্তার ফসল'। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি ১০ শয্যার হাসপাতাল করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। তার চিন্তা ছিল চিকিৎসাসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেন।