আইয়ুব পাগলার জন্য অনন্য ভালোবাসা

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পরিচয়হীন ভিক্ষুক আইয়ুব পাগলার জন্য ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বাসিন্দারা। আইয়ুব পাগলা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু রেখে গেছেন অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ। তার মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। তার জন্য দোয়া কামনায় হাজারো মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আইয়ুব পাগলা বলতেন, 'একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খামো।' তার জন্ম কোথায়? তার পরিচয় কী? কেউ বলতে পারেন না। জীবনযুদ্ধে পরাজিত সেই আইয়ুব পাগলা চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে মারা যান। তবে তিনি রেখে গেছেন অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ। আইয়ুব পাগলার মৃতু্যর খবরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ মর্মাহত হন। আইয়ুবকে উত্তরউলস্ন্যা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। আইয়ুবের মৃতু্যর সঙ্গে সঙ্গে কেউ কাফনের কাপড়, কেউ বাঁশ, কেউ আগরবাতি নিয়ে দাফনের জন্য এগিয়ে আসেন। মৃতু্যর পর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শোকবার্তার ব্যানার-পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের ফেসবুকেও জায়গা করে নিয়েছেন এই আইয়ুব পাগলা। আইয়ুব পাগলার জানাজার পর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের জন্য মজলিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে ৪০ দিন পরে (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সাঘাটার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে 'আইয়ুব-এর মজলিস' সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও ওই মজলিসে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মুসলমাদের জন্য তিনটি গরু ও একটি খাসি এবং হিন্দুদের জন্য দুটি খাসি আলাদা রান্না করা হয়েছিল। এই মজলিসের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। সাঘাটার উল্যাবাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, আইয়ুব পাগলার জন্ম কোথায় আর কীভাবে তিনি সাঘাটার উল্যাবাজারে এসেছিলেন এর সঠিক কোনো তথ্য জানা না থাকলেও এখানে অনেক দিন বসবাস করেছেন। তার প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভালোবাসা ছিল। সাঘাটার উলস্ন্যাবাজার কলোনির বাসিন্দা জিলস্নুর রহমান বলেন, আইয়ুব পাগলা কারও ক্ষতি করত না। ক্ষুধা লাগলে মানুষের কাছে খাবার চাইত, সবাই ওকে ভালোবাসত। হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত। একই এলাকার আব্দুল মালেক জানান, আইয়ুব পাগলাকে এত মানুষ ভালোবাসত কেউ বুঝতে পারেনি। তার মৃতু্যর পর এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কাফিল উদ্দিন বলেন, আইয়ুব পাগলার মজলিসে এসে আমরা অবাক। একজন পাগল ভিক্ষুক এতটা জনপ্রিয় হয় আগে জানতাম না। সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বলেন, মাঝে মাঝে আইয়ুব পাগলা অদৃশ্য হয়ে যেত। ১০-২০ দিন আবার কখনো ১-২ মাস পর আমাদের মাঝে হাজির হতো। এই পাগলের প্রতি হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ মিলেছে তার মজলিসের চিত্র দেখে। সবই আলস্নাহর ইচ্ছা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আইয়ুবের জানাজার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মজলিস করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার আইয়ুবের মজলিস করা হলো। পরপারে আইয়ুব যেন শান্তিতে থাকে সেই দোয়া করি। আইয়ুব পাগলা সবার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।