পর্ব-২

কক্সবাজারের শুঁটকির সুনাম ও চাহিদা আছে বহির্বিশ্বেও

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
বাংলাদেশে শুঁটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় কক্সবাজারে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ জেলার শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বহির্বিশ্বেও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের মানুষের কাছে শুঁটকি প্রিয় খাবার হিসেবে সমাদৃত। শুধু বাংলাদেশিদের কাছেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছেও শুঁটকি জনপ্রিয় খাবার। কক্সবাজারের আবহাওয়া শুঁটকি শুকানোর জন্য খুবই উপযোগী। সমুদ্র উপকূলে কাঁচা মাছকে প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত 'শুঁটকি মাছ' উৎপাদন হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে ভালো মানের শুঁটকি। সমুদ্রের তীরবর্তী হওয়ায় এখানে রোদের প্রচন্ড তাপ রয়েছে। এছাড়া বায়ু চলাচলেও নেই কোনো প্রতিবন্ধকতা। ব্যাপকভিত্তিতে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শুঁটকি শিল্পে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে। গভীর সাগর থেকে অসংখ্য ট্রলার মাছ আহরণ করে ঘাটে ভিড়ে। এসব ফিশিংকৃত মাছ শুকিয়ে শুটঁকি মহাল তৈরি করে কোটি কোটি টাকার মাছ দেশে-বিদেশে রপ্তানি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সাগর উপকূলে মাচা তৈরি করা হয়। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি সেই ঘেরগুলোতে পসরা সাজানো হয় নানারকম মাছের। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ শুঁটকি তৈরি হয়। এই শুঁটকির মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে সামুদ্রিক রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্কা, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, চাপিলা, চিংড়ি, বাটা, ট্যাংরা, অলুয়া, পোপা মাছের শুঁটকি। আগামী মে পর্যন্ত চলবে শুঁটকির উৎপাদনের মৌসুম। এ বছর শুঁটকি বিক্রি করে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬১ কোটি ৯ লাখ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮২ কোটি ১৫ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৯১ কোটি ৬ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১২ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১২২ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩০ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪৫ কোটি, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২০০ কোটি, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩৫০ কোটি, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৪৫০ কোটি এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১০০০ কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শাহাদত উলস্নাহ জানান, শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার শুঁটকি বেসরকারিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, ব্রিটেন, আমেরিকা, চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বিশাল পরিমাণে শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে। কক্সবাজারে নুনিয়াছড়া এলাকার ১৬টিসহ জেলার ৪১টি উৎপাদনকারী শুঁটকি মহল পোপা শুঁটকি রপ্তানি করে। রপ্তানিমুখী শুঁটকির কারখানায় শুঁটকি ডিহাইড্রেড করে রপ্তানি উপযোগী করা হয়। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এ বছর শুঁটকি রপ্তানি থেকে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা আয়ের আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শুঁটকি মাছ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুল শুক্কুর জানান, সরকার ফ্রোজেন ফুডসহ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে শতকরা ১০ ভাগ ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে। কিন্তু পোপাসহ অন্যান্য শুঁটকি রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। এ সুবিধা পেলে শুঁটকির বিপরীতে বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন অতীতের রের্কড ছাড়িয়ে যেতে পারে। হিমায়িন সি ফুডস-এর স্বত্বাধীকারী ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শুঁটকির মানের চেয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎপাদিত শুঁটকির গুণগত মান ভালো। এটি স্বাস্থ্যসম্মতও। দেশের রপ্তানি পণ্য তালিকায় শুঁটকি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশের বাজারে যে পরিমাণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণ রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে শুঁটকি রপ্তানিতে সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেতো বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শুঁটকি রপ্তানি অনেকগুণ বেড়েছে।