তবুও ইভিএম উঠছে একনেক সভায়

চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দেড় লাখ ইভিএম কেনার উদ্যোগ অনুমোদনের জন্য উঠছে আগামী একনেক সভায় নিবার্চনে ইভিএম ব্যবহারের আশা পরিকল্পনামন্ত্রীর

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে চলছে বিতকর্। ইভিএম নিয়ে সমালোচনায় মুখর সরকারবিরোধী দলগুলো। গত ২ সেপ্টেম্বর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, ‘তাড়াহুড়া করে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে।’ এ অবস্থায় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এই মেশিন কিনতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন হতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় অথৈর্নতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সমীক্ষা যাচাই না করে ইভিএম প্রকল্প কীভাবে একনেকে উঠছে- এমন প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেন, এটার সমীক্ষা যাচাইয়ের দরকার নেই। নিবার্চন কমিশন ইভিএম আগে ব্যবহার করেছে। এখন কমিশন টাকা চেয়েছে। তারা প্রকল্পের অনুমোদন দেবেন। এটা দেখবে নিবার্চন কমিশন। মন্ত্রী আরও বলেন, তিনি আশা করেন, আরপিও সংশোধন হবে। জাতীয় নিবার্চনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে এটা পুরোপুরি নিভর্র করছে ইসির উপর। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএমের ব্যবহার চায় নিবার্চন কমিশন (ইসি)। গত ২৮ আগস্ট কমিশনের সচিব হেলালউদ্দিন আহমেদ ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানান। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিবার্চন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নিবার্চন আইনের সংস্কার, রাজনৈতিক দলের মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে কমিশন। ইভিএম ব্যবহারের নানা যুক্তি তুলে ধরে ইতোমধ্যে বিশাল ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নিবার্চন কমিশন (ইসি)। ইসির পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, নিবার্চন কমিশন সচিবালয়ের তিন হাজার ১১০ জন সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্ ও কমর্চারীদের নিবার্চন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি, নিবার্চন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণবিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রাখবে। প্রস্তাবনায় ইসি জানায়, বাংলাদেশ নিবার্চন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব হলো জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নিবার্চন সম্পন্ন করা। এছাড়া ইভিএমের বিভিন্ন গুরুত্বপূণর্ দিক তুলে ধরা হয় এতে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ইভিএম প্রকল্প আগামী সপ্তাহে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। ইভিএম ব্যবহারে নিবার্চন কমিশন আমাদের কাছে প্রকল্প পাঠিয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্তের কথা গত ৩০ আগস্ট জানায় নিবার্চন কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য অনেকটা তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে। দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার তারিখ ছিল গত ১৯ আগস্ট, যা স্থগিত হয়ে যায়। এ সভা গত মঙ্গলবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে নিবার্চন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই ব্যাংকে এসব যন্ত্রপাতি আনতে এলসিও (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনুমোদন দিয়ে পযার্য়ক্রমে অথর্ছাড় করব। আগেই এলসি খোলার কোনো বিধান নেই। খুললেও আমার জানা নেই।’ পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় লাখ ইভিএম সিস্টেম এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২১ কোটি সাত লাখ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়বে প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুন পযর্ন্ত। যদিও বতর্মান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেষ হবে। তার আগে ডিসেম্বরে নতুন সরকার গঠনের জন্য জাতীয় সংসদ নিবার্চন হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে ভোটের বাকি মাত্র কয়েক মাস।