আজ পযর্ন্ত শুনানি মুলতবি

অস্থায়ী আদালতে আসতে অস্বীকৃতি খালেদা জিয়ার

বিচারক আখতারুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে না এলে কীভাবে তিনি জামিনে থাকবেন, এ ব্যাপারে তার আইনজীবীদের আইনি ব্যাখ্যা দিতে হবে

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
খালেদা জিয়া
যাযাদি রিপোটর্ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুনীির্ত মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারের অস্থায়ী আদালতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ কারণে তাকে আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কতৃর্পক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। পরে উভয় পক্ষের যুক্তিতকর্ শেষে বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত শুনানি মুলতবি করেছে আদালত। বুধবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অবস্থিত ঢাকার অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান শুনানির দিন ধাযর্ করেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে না এলে কীভাবে তিনি জামিনে থাকবেন। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বৃহস্পতিবার আইনি ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। তিনি আদালতে না এলে আইন অনুযায়ী এ মামলার বিচারকাজ চলবে।’ আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করে। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসে। সেদিন আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া আদালতকে বলেছিলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। তিনি আর আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছা আদালত তাকে সাজা দিতে পারে। এর আগে এ মামলার বিচার চলছিল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলায় দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক) তার যুক্তিতকর্ উপস্থাপন শেষ করেছে। খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতকর্ শুনানি বাকি রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগঁাও থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলার অপর আসামিরা হলেন হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান। আদালত মুলতবি রাখার আবেদন গতকাল এ মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে কারাগারের আশপাশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সেখানে অবস্থান নেন। সকাল ১০টার দিকে আসেন আদালতের কমর্চারীরা। এরপর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতে আসেন। পরে বিচারক আসার পর তিনি তার খাসকামরায় অবস্থান করেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আদালতের এজলাসে আসেন। শুরুতে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে বলেন, এ আদালত প্রকাশ্য আদালত নন, সংবিধানপরিপন্থি। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করেন। অপর আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আদালতকে বলেন, এ আদালত গুহার মতো। এখানে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া যায় না। যেকোনো সময় যে কারও ‘সাফোকেশন’ হতে পারে। এ আদালত সংবিধানপরিপন্থি। এক মাসের জন্য আদালতের কাযর্ক্রম মুলতবি চেয়ে আমিনুল বলেন, এমন আদালত তিনি তার পেশাগত জীবনে দেখেননি। আইনজীবী, সাংবাদিকদের বসার পযার্প্ত জায়গা নেই। সাধারণ মানুষের আদালতে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। এটি কোনোভাবে প্রকাশ্য আদালত হতে পারে না। এ ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ চান আইনজীবী আমিনুল। তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, ‘আইন মেনে এ আদালত গঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার সুবিধার জন্য এখানে আদালত বসেছে। একদিকে খালেদার আইনজীবীরা বলছেন, এ আদালত প্রকাশ্য আদালত নয়, সংবিধানপরিপন্থি। অথচ এ আদালতে আবার জামিন চাচ্ছেন।’ মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলছেন, তিনি আদালতে আসবেন না। তিনি বিচারকাজে সহায়তা করছেন না। তার নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে আদালত বসেছেন। তাকে হুইলচেয়ারে করে আনা হচ্ছে।’ এর জবাবে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাদের চারজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। দলের মহাসচিব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।’ তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বারবার বলা হচ্ছে খালেদা অসুস্থ। উনি (খালেদা) কিসের অসুস্থ। উনি আদালতে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সবাই দেখেছে।’ দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের একপযাের্য় বিচারক খালেদার আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাননি, তা কারা কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে। আপনারা আবার জামিন চেয়েছেন।’ বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত খালেদার জামিন মেয়াদ বাড়িয়ে আইনি ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য খালেদার আইনজীবীদের নিদের্শ দিয়ে বিচারক এজলাস ছাড়েন।