অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার ৭০ শতাংশ

ফাইজার ও মডার্না যখন দাবি করছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের সাফল্য ৯৫ শতাংশ, তখন এই খবরটিকে একই সঙ্গে হতাশাব্যঞ্জক এবং বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:১৯

ম যাযাদি ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাসের যে ভ্যাকসিনটি নিয়ে কাজ করছে, সেটির একটি ব্যাপক ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এটি ৭০ ভাগ মানুষের মধ্যে কোভিড বাসা বাঁধতে দেয় না। ফাইজার ও মডার্না যখন দাবি করছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের সাফল্য ৯৫ শতাংশ, তখন এই খবরটিকে একই সঙ্গে হতাশাব্যঞ্জক এবং বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি বলা হচ্ছে, অন্য টিকা দুটির তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকাটি হবে অনেক সস্তা, সংরক্ষণ সহজ। সুতরাং, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ যদি এই টিকা অনুমোদন করে, সেটি মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই টিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে, ভ্যাকসিনটিকে আরও নিখুঁত করে তোলা গেলে এটিরও সাফল্যের হার বেড়ে ৯০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এর আগে গত বুধবার ফাইজার জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তাদের করোনার টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর তাদের একটি ডোজের দাম পড়বে ২৫-৩৭ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। অক্সফোর্ডের টিকার আগে সম্প্রতি তিনটি টিকার অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে। এগুলো হলো, ফাইজার-বায়োএনটেক, স্পুটনিক ও মডার্না। ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। এই টিকায় উলেস্নখযোগ্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি বলে দাবি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি মডার্না ইনকরপোরেশন গত সোমবার জানায়, তাদের তৈরি টিকা করোনা ঠেকাতে ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর। আর রাশিয়ার দাবি, তাদের তৈরি স্পুটনিক টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের বেশি। এসব টিকার তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকা কম কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে এটি মহামারি মোকাবিলায় উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, অন্য ভ্যাকসিনগুলোর তুলনায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনেক সাশ্রয়ী। আর সে কারণে সহজেই এটি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। ব্রিটিশ সরকার এর মধ্যেই অক্সফোর্ডের টিকার ১০ কোটির চাহিদার কথা জানিয়েছে, যা দেশটির পাঁচ কোটি মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, 'আমরা হয়তো আগামী গ্রীষ্মের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অনেকটা কাছাকাছি চলে যেতে পারব। ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের একে অপরকে দেখে রাখতে হবে।' অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে এরই মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলজুড়ে ২০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী অক্সফোর্ডের টিকার মানবপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গবেষকরা বলছেন, মানবপর্যায়ের পরীক্ষায় তারা ৭০ শতাংশ সাফল্য দেখতে পেয়েছেন। তবে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, স্বেচ্ছাসেবীদের একটি অংশের মধ্যে এই টিকার ৯০ শতাংশ সাফল্য পাওয়া গেছে, যাদের প্রথমে টিকার অর্ধেক ডোজ, পরে বাকিটা দেয়া হয়েছিল। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রধান পরীক্ষক অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, 'আমরা এই ফল নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।' এরই মধ্যে ৪০ লাখ টিকা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে যুক্তরাজ্যের জন্য। আরও ৯ কোটি ৬০ লাখ টিকার সরবরাহ বাকি রয়েছে। তবে যে কর্তৃপক্ষ টিকার নিরাপত্তার দিকগুলো, কার্যকারিতা এবং মানের বিষয় তদারকি করে, সেই কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয়ার পরই এই টিকার ব্যবহার শুরু করা যাবে। তবে যুক্তরাজ্য একটি ব্যতিক্রম ধরনের গণটিকা কর্মসূচি শুরু করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সে জন্য সর্দি-কাশি বা শিশুদের টিকা দেয়ার যে বার্ষিক কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে, সেখানে কিছু কাটছাঁট করা হতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় বয়স্ক সেবা কেন্দ্রের বাসিন্দা আর কর্মীরা সবার আগে এই টিকা পাবেন। এরপরই পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৮৫ বছর বয়সের ওপরের ব্যক্তিরা। এরপর বয়সের ধাপ অনুযায়ী বাকি সবাই টিকা পাবেন।