রেলকে প্রায় গলা টিপে হত্যা করতে গিয়েছিল বিএনপি :প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০০:২০

ম স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
রোববার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রেলকে প্রায় গলা টিপে হত্যা করতে গিয়েছিল বিএনপি সরকার। আমরা এসে এখন আবার তাকে জীবিত করেছি এবং রেলই এখন মানুষের সব থেকে ভরসা। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি রেল সেই সুযোগটা মানুষকে করে দিচ্ছে যে, আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। রোববার সকালে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ' প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদে আয়োজিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা, ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি প্রমুখ। তাছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, হাবিবে মিলস্নাত এমপি, ডা. আব্দুল আজিজি এমপি, মমিন মন্ডল এমপি, তানভীর ইমাম এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যমুনার পূর্বপ্রান্তে তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি এমপিসহ জেলা-উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো রেলের উপরও আঘাত এসেছিল জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ওই সময় যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা না করে ক্ষমতাকে ভোগ করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলায় ব্যস্ত ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেললাইন সংকোচন শুরুর পাশাপাশি রেলে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে সরকার নৌ, রেল ও আকাশপথের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আমাদের আরও পস্ন্যান আছে যে, একেবারে ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেললাইন নিয়ে যাব। তারও সমীক্ষা আমরা শুরু করব এবং সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। হ শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদেরকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ করতে হবে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এই দুটোর সাথে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণে জাপানের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। জাপান সরকার কিন্তু আমাদের সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাপানের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তিনি। যমুনায় রেল সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নানা বাধার কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত, কারণ এক সময় এখানে সেতু করার ব্যাপারে আমাকে অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেনদরবার করতে হয়েছে। আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে, আমি মনে করি এতে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি তো হবেই এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারব, যা আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি সেটা করব। কারণ জাপানের মতো বন্ধু যাদের সাথে আছে তাদের আর চিন্তার কিছু নাই, সেটা আমি বলতে পারি।' শেখ হাসিনা বলেন, ভৈরব নদীর উপর যে সেতু সেখানেও কিন্তু রেললাইনের উপর দিয়েই গাড়ি পার হতো। আমরা সেখানে আবার নতুন সেতু করে দিয়েছি। কালুরঘাটেও নতুন রেল সেতু আলাদা এবং সড়ক সেতু করা হচ্ছে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ডাবল লেনের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাইকা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে মতান্তরে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ সমাপ্ত হবে। এই সেতু দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে একইসঙ্গে দুটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি সব ধরনের মালবাহী ট্রেন অনায়াসে চলাচল করতে পারবে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক ও রেল যোগাযোগ চালু হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে লাগানো রেল লাইন দিয়ে প্রথমে ব্রডগেজ ও মিটারগেজের চারটি ট্রেন দৈনিক আটবার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রী চাহিদা বাড়তে থাকায় সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেতুর উপরে চলাচলকারী ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৮টি ট্রেন নিয়মিত স্বল্প গতিতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও সময় অপচয়ের পাশাপাশি প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। ট্রেন যোগাযোগব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ডেডিকেডেট রেল সেতু। এ সেতু চালু হলে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন একশ' কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে।