বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর্য ইসু্যতে বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় সতর্ক পুলিশ

সাখাওয়াত হোসেন
  ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:২১

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ঠেকাতে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তৎপরতা এবং প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচিকে ঘিরে দুই পক্ষ প্রায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবিরসহ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি একাধিক কুচক্রী মহল ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, হুজুগে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নাশকতায় নামানোর ফন্দি আঁটতে পারে- এমন আশঙ্কাও করছেন গোয়েন্দারা। পরিস্থিতিতে যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তোড়জোড় প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি কয়েক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। ভাস্কর্য ইসু্যতে ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে মরিয়া বিশেষ কোনো চক্র যাতে নিয়ে উসকানিমূলক ভিডিও কিংবা পোস্ট ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যে আপলোড করতে না পারে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ল-ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি), ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজ অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাই বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওর্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের র্(যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেলকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উসকানিমূলক পোস্টদাতাদের দ্রম্নত শনাক্ত করতে তথ্য-প্রযুক্তির লজিস্টিক সাপোর্ট প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সতর্কতার অংশ হিসেবে কওি মাদ্রাসাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নদের বিভ্রান্ত করে ষড়যন্ত্রকারী কোনো গোষ্ঠী যাতে বিক্ষোভ মিছিল কিংবা মানববন্ধনসহ অন্য কোনো কর্মসূচির নাে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ভাস্কর্য ইসু্যতে হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় একাধিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা যেভাবে উত্তপ্ত বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে ইসু্যতে তাদের পক্ষ থেকে যেকোনো সময় কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। যাতে ষড়যন্ত্রকারীরা যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে। তাই ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে কোনো দল বা সংগঠন কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে সারাদেশে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময় আন্দোলনকারীদের আড়ালে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো ধরনের উসকানি দিয়ে কিংবা কৌশলী কোনো ফাঁদ পেতে পুলিশকে যাতে উত্তেজিত করে তুলতে না পারে সে ব্যাপারেও সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। স্পর্শকাতর ইসু্যতে ডাকা যেকোনো কর্মসূচি সর্বোচ্চ সহনশীলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনে ভিন্ন মোড় দেওয়ার সুযোগ পাবে এমনটিও ভাবা হচ্ছে। \হবিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে গোয়েন্দাদের পাঠানো বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করার উসিলায় সরকার পতনের ইসু্য বানাতে হেফাজত ইসলা বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই) দুটি ইসলাি দল সামনে থাকলেও তাদের পেছনে ভিন্ন এজেন্ডাধারীরা সম্পৃক্ত হতে পারে। তারা মূলত ভাস্কর্য নির্মাণ ঠেকানোর আড়ালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়ে নাশকতা সৃষ্টির শঙ্কার কথাও ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। গোয়েন্দা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা জামায়াত। অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। তারা নতুন নীতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে ধর্মভিত্তিক কোনো দল আন্দোলনের ডাক দিলে বা বড় ধরনের কর্মসূচি হাতে নিলে তা কাজে লাগাবে জামায়াত। এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ঠেকাতে হেফাজতসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের তৎপরতার নেপথ্যে 'ভিন্ন রহস্য' রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, ইসলামপন্থি এই দলগুলো সম্প্রতি ঢাকার রাজপথে ফ্রান্স-বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করে তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। তারা মূলত ধর্মভিত্তিক ইসু্য নিয়ে আন্দোলন করে রাজনৈতিক অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। যা বড় দলগুলোকে চাপের মুখে ফেলছে। যদিও ইসলামপন্থিদের উত্থান হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন না। কিন্তু ইসলামপন্থি দলগুলো যে শক্তি সঞ্চয় করছে- সেটা আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকে স্বীকার করেন। সেজন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। আর ব্যাপারে বিএনপির পাল্টা অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে হেফাজতে ইসলা যখন ২০১৩ সালের ে মাসে নাস্তিক ইসু্য তুলে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল, তখন বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের তাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই আন্দোলনে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, ভাস্কর্য ইসু্যতে হেফাজতসহ ইসলামপন্থি অন্য দলগুলো মাঠ কিছুটা গর করতে পারলে বিএনপি-জামায়াত সরাসরি তাদের সহযোগিতা করতে পারে। এতে আন্দোলনের নাে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রবল। তাই ব্যাপারে আগা প্রস্তুতি জরুরি মনে করা হচ্ছে। তবে ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের ইসু্যতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো টার্গেটই নেই বলে দাবি করেছেন হেফাজত ও ইসলামপন্থি দলের একাধিক নেতা। ইসু্যটি তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে বলে মনে করছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে