বছর ঘুরে এলো বিজয়ের মাস

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২৫

যাযাদি রিপোর্ট

বছর ঘুরে চলে এলো বিজয়ের মাস। বিজয়ের লাল-সবুজ কেতন ওড়ানোর সেই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যে অগ্নিশপথের শুরু, দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর তার শেষ। দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে রচিত হয় অনন্য এক গাঁথা। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি পায় স্বাধীনতার স্বাদ। বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের একটি নতুন দেশ। ঔপনিবেশিক শত্রম্নমুক্ত হয় বাংলার মাটি। তাই আনন্দ আর আবেগের অনুভূতি নিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় মাসটি পালন করে গোটা বাঙালি জাতি। আজ থেকে বিজয়ের দিন পর্যন্ত পুরো দেশে পথে-ঘাটে বিজয়ের পতাকা উড়বে আকাশে-বাতাসে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয়ের মাসে নানা কর্মসূচি পালন করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধীনতার আন্দোলন পরিণত হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলা ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করে মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিবেশী ভারত এসে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির পাশে। সুদীর্ঘ ৯ মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত-সাগর পাড়ি দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যে জাতি ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে। ডিসেম্বরে প্রত্যেক বাঙালি ফিরে যায় একাত্তরের অবিনাশী যুদ্ধ-দিনে। মানুষের মনে জাগে আনন্দ-বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ নিরস্ত্র নিরপরাধ মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে জাতি হারিয়েছে তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদেরও। ১৪ ডিসেম্বর পালন করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা সেসব দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র জুগিয়েছিল মুক্তির লড়াইয়ের অনিঃশেষ প্রেরণা। সে সময়ের গানে গানে বিধৃত আছে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাস, ত্যাগ, লড়াই ও মুক্তির মন্ত্র। ১৯৭১- দীর্ঘ ৯টি মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির মৃতু্যপণ জনযুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল প্রত্যাশিত বিজয়। লাখো শহীদের আত্মদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অবদান, ত্যাগ এবং অসংখ্য মা-বোনের মহামূল্যবান সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নিজের স্থায়ী আসন অর্জন করে নেয় বিশ্বমানচিত্রে। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি এই ডিসেম্বরজুড়ে স্মরণ করবে লাখো শহীদকে। তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা বাস্তবায়নের শপথে নতুন করে উজ্জীবিত হবে জাতি। স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি আজ নতুন আশায় বুক বেঁধেছে, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে। দীর্ঘ পথচলায় দুর্নীতি-অপশাসন ও স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মতো হাজারো জঞ্জাল ভরে যাওয়া স্বপ্নের জাল ঝেড়ে পরিষ্কার করার সময় এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রত্যাশিত রায় হয়েছে। একাত্তরের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তোলা বা রোধ করার এখনই সময়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে বিচারের মাধ্যে নির্মূল করার কাজটি সরকার সাহসের সঙ্গে সম্পন্ন করবে, এমনটি দেখতেই এখন অধীর অপেক্ষা দেশের কোটি কোটি মানুষের। বিজয় মাসের প্রথ দিন আজ ১ ডিসেম্বর পালিত হবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস। রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দিবস উত্থাপন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি দেশব্যাপী দিবস পালন করবে। ১৯৭১ সালের দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকসেনারা পদে পদে মার খায়। সিলেটের কানাইঘাটে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। জুড়ি ও বড়লেখা এলাকা থেকে পাকবাহিনী কামান সরিয়ে ফেলে আর মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকসেনারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়ে কুলাউড়ায় পালিয়ে যায়। এদিন মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। কুমিলস্নার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়। সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিন রাতে কর্নেল শফিউলস্নাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রম্নমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহীদ হন, আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।