প্রধানমন্ত্রীর অনন্য মানবিকতা

শিশু ভ্যানচালক শম্পার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০৪

ইউসুফ আলী, জামালপুর
প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে আবেগাপস্নুত শিশু শম্পা ও তার পরিবার -যাযাদি

মেয়েটির বয়স মাত্র ১০ বছর। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। যে বয়সে হেসে-খেলে ও বইয়ের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকার কথা, সে বয়সে অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ ও পরিবারের খাবার জোগাতে হাতে তুলে নিয়েছে ভ্যান চালানোর মতো কঠিন কাজ। এমন কঠিন কাজ করছে জামালপুরের শম্পা খাতুন। গত এক বছর ধরে সে পড়াশোনার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ মেটানোর অর্থ জোগাচ্ছে। সম্প্রতি এ স্পর্শকাতর বিষয়টি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বিষয়টি জেনে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন এবং শিশু শম্পার পরিবার ও তার অসুস্থ বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি শিশু শম্পার বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন এ পরিবারের থাকার জন্য পাকাঘর তৈরির কাজও শুরু করেছে। জানা যায়, জামালপুর সদরের নাকাটি গ্রামের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে ছোট শম্পা খাতুন (১০)। সে সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বড় মেয়েকে কয়েক বছর আগে বিয়ে দেন। পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারান শফিকুল। চিকিৎসার জন্য প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়। পরিবারের সবকিছু বিক্রি করে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু পা ভালো হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে পড়ে আছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় শম্পাদের উপর নেমে আসে দুর্যোগ। মা নেবুজা বেগমের সবজি বিক্রির অর্থে কোনোমতে তাদের সংসার চলছিল। তাই অসুস্থ বাবার চিকিৎসাসহ সংসারের খরচ মেটানোর জন্য এক বছর আগে ভ্যান চালানো শুরু করে শিশু শম্পা। জেলা প্রশাসক এনামুল হক জানান, সংবাদমাধ্যমে 'বাবার চিকিৎসার জন্য ভ্যান চালায় শিশু শম্পা' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু শম্পার অসুস্থ বাবার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ, পরিবারটির ভরণ-পোষণ, তাদের থাকার ঘর নির্মাণ ও তার লেখাপড়ার সব দায়িত্ব নিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ এলে তিনি বুধবার ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকাতেই শফিকুলের চিকিৎসা হবে। শিশু শম্পার লেখাপড়াসহ পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে যা প্রয়োজন তাই করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে শম্পাদের থাকার জন্য একটি পাকা ঘর তৈরির কাজ উদ্বোধন করেন ডিসি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন, কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. মাহবুবুর রহমান মঞ্জু, স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দুর রহমান সরকার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী এবং সাংবাদিকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শম্পা বলে, 'আমি আর ভ্যান চালাব না, লেখাপড়া করব।' শম্পার মা বলেন, বাড়িতে ইট, বালু ও সিমেন্ট আসছে। বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, যা তিনি কল্পনাও করেননি। তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন।