করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃতরে সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়াল

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে আর হু-হু করে বাড়তে থাকা আক্রান্তের সংখ্যাও সাড়ে ৬ কোটি পেরিয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ১৫ লাখ ২ হাজারেরও বেশি। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে চার কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৫ জন। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর মৃতু্য বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃতু্য বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৭ জন এবং মৃতু্য হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৭ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত মৃতু্য বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ৮০৯ জন। আর মৃতু্য হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬২১ জনের। মৃতু্য বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকো চতুর্থ স্থানে থাকলেও আক্রান্ত বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ১১ নম্বরে। মেক্সিকোতে বুধবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ২২ হাজার ৩৬২ জন এবং মৃতু্য হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৬৫ জনের। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য মৃতু্য বিবেচনায় রয়েছে পঞ্চম স্থানে, তবে আক্রান্তের দিক থেকে দেশটির অবস্থান সপ্তম। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩০ জন এবং মৃতু্য হয়েছে ৫৯ হাজার ১৪৮ জনের। করোনার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, মৃতু্যতে রেকর্ড এদিকে, প্রথমদিকে করোনাভাইরাস মহামারিকে হেলাফেলা করার পরিণাম বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বে করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত-মৃতু্যর রেকর্ড তাদের। অর্থনীতিতেও লেগেছে জোর ধাক্কা। মাঝে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহে আবারও হু-হু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃতু্যও। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসজনিত কারণে মারা গেছে অন্তত ২ হাজার ৯৫৭ জন, যা গত ১৫ এপ্রিল থেকে একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ড। গোটা মহামারির মধ্যে দেশটিতে একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ডও এটাই। সর্বশেষ তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৫ হাজার ২৮৬ জন। আর মারা গেছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩০০ জন। কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্টের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। বুধবার দেশটিতে এক লাখেরও বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে গড়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৪৮ জন, যা গত জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় আড়াইগুণ বেশি। গত গ্রীষ্মে করোনাজনিত কারণে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ১৩০টি মৃতু্য দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহে সেই সংখ্যা দেড় হাজার পার হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দৈনিক প্রাণহানির সংখ্যা গড়ে দুই থেকে তিন হাজার হতে পারে। এমনকি তা চার হাজারের কাছাকাছিও চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের মেডিসিন বিভাগের সংক্রামক রোগ শাখার প্রধান ডা. ডেভিড আন্দেস বলেন, তাদের হাসপাতালে এরই মধ্যে রোগী ধারণক্ষমতার ৯৮ শতাংশ পূরণ হয়ে গেছে। তার কথায়, 'সংখ্যাগুলো আমাদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।' এ চিকিৎসক বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন রোগীদের স্থান সঙ্কুলানে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক রোগীকেই শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বহু চিকিৎসককে মাত্রাতিরিক্তি ডিউটি করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. রবার্ট রেডফিল্ড বলেছেন, আগামী কয়েক মাস দেশটির হাসপাতালগুলোতে রোগীর বাড়তি চাপ থাকতে পারে। তার কথায়, 'ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি কঠিন সময় যাবে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনস্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় হতে যাচ্ছে সেটি।'