মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতার ঘোষণা ভারতের

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
একাত্তরের এ দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতায় বিশাল সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার দেশের সক্রিয় সহযোগিতার ঘোষণা দেন। ইন্দিরা গান্ধীর এ ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে যায়, বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছে ভারত। এ সংবাদে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষ খুশিতে রাস্তায় নেমে আসে। শরণার্থী শিবিরগুলো ভাসতে থাকে আনন্দের জোয়ারে। একাত্তরের এদিনে পাকিস্তানি হানাদার এবং রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) মুক্ত হয়। ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ফুলবাড়ী উপজেলার জলপাইতলি, রুদ্রানী, পানিকাটা, দেশমা, জলেশ্বরী, মিরপুর, রানীনগর, আমড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে এসে পাক হানাদার ও রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের ওপর চতুর্মুখী আক্রমণ চালায়। আক্রমণের মুখে খান সেনারা নিশ্চিত মৃতু্য বুঝতে পেরে মৃতু্যর হাত থেকে বাঁচার জন্য ফুলবাড়ীর শাখা যমুনা নদীর লোহার ব্রিজটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে গ্রামীণ পথে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ীকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে উলস্নাস করে। একাত্তরের এ দিনে লক্ষ্ণীপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল হায়দার এবং অপর কমান্ডার হাবিলদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালালে ৭০ পাক হানাদার ও তাদের বিপুলসংখ্যক সহযোগী, রাজাকার নিহত হয়। মতলবে ৩ ডিসেম্বর রাতে বরদিয়া বাজার এলাকায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড বাধার মুখে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী কুমিলস্না-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ ব্রিজটি মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্টেড ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর ডি বিহারের নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিলস্নায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংকবহর বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবিদ্বার সদরে আসে। হানাদাররা এ রাতে দেবিদ্বার ছেড়ে কুমিলস্না সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বারের উলস্নাসিত বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। কামালপুরে (জামালপুর) এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ও সুসজ্জিত একটি দল বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। টানা ১০ দিনের যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর এখানে ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের পতন ঘটে। পাক ক্যাপ্টেন হাসান কুরেশির নেতৃত্বে ওই রেজিমেন্টের ১৬৫ পাকসেনা এবং ৩০ রেঞ্জারসহ বিপুলসংখ্যক অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী হানাদারমুক্ত করে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায়। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে এদিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জীবননগরের দখলদারিত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়। নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণে এদিনই জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) মুক্ত হয়। একের পর এক এলাকা দখলমুক্ত করে বাংলার মুক্তিপাগল বীর মুক্তিসেনারা তখন অগ্রসর হচ্ছিলেন ঢাকার দিকে। আর ঢাকায় তখন গেরিলা যোদ্ধারা নানা অপারেশনে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে।