ডাকসু নির্বাচন হতে পারে আগামী মার্চে: উপাচার্য

দুই নেতার কোলাকুলি

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:৪০

যাযাদি রিপোটর্
রোববার ডাকসু নিবার্চন নিয়ে বৈঠকের পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের সঙ্গে কোলাকুলি করেন Ñযাযাদি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন আগামী মার্চে হতে পারে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তার আশা, এ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকার খসড়া অক্টোবরের মধ্যে প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সভা শেষে উপাচার্যের কার্যালয়সংলগ্ন লাউঞ্জে উপাচার্য আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের একথা বলেন।
কবে নাগাদ ডাকসু নির্বাচন দেয়া হতে পারেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘প্রভোস্ট কমিটি, শৃঙ্খলা পরিষদ ও সিন্ডিকেট থেকে একটি নির্দেশনা তো আগেই দেয়া আছে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য কাজের যে লোড, যে কর্মপরিধি তা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কমিটিগুলো একটা নির্দেশনা ইতোমধ্যেই দিয়েছে, সেটা হলো মার্চ ২০১৯। এ নিরিখে এখন পর্যন্ত আমাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। আশা করি, অক্টোবরের মধ্যে খসড়া যে ভোটার তালিকা, সেটি প্রণয়ন করব। এই ভোটার তালিকা প্রণয়ন একটি জটিল কাজ। সেটি করতে পারলে অনেক এগিয়ে যাব।’
ডাকসু নির্বাচন দেয়ার আগে হলে সব দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে ছাত্রদের দাবি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘হলগুলোতে অবস্থানের জন্য প্রভোস্টরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মধুর ক্যান্টিনকেন্দ্রিক যে রাজনৈতিকচর্চা, সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের যে কার্যক্রম চালাবে, তাতে কারও জন্য প্রশাসন থেকে কোনো বাধা নেই। বরং আমরা সেটাকে উৎসাহিত করি।’
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘এখানে প্রতিটি ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব সংগঠনের নেতারাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সংসদীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ করে শিক্ষার্থীরা আলোচনা করেন। তাদের আলোচিত বিষয়গুলো আমাদের প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডি লিখে রেখেছেন। এটা নিয়ে পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, আলোচনা শেষে এ নিয়ে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আলোচনাকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে কবে নাগাদ ডাকসু ইলেকশন দেয়া যায়, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান, সম্ভাব্য তারিখ এসব বিষয় নিয়ে ছাত্ররা আলোচনা করেছে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, এটা নিয়ে প্রভোস্ট কমিটির সঙ্গে আমরা বসে পর্যালোচনা করব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এটা আমাদের প্রাথমিক আলোচনা, আমরা পরবর্তী সময়ে আরও বসব।’ কারা ভোটার হতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকসুর যে কনস্টিটিউশন আছে তা অনুযায়ীই ভোটার তালিকা হবে।
গত ১০ বছরে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে তাদের কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

 দুই নেতার কোলাকুলি

গত প্রায় ২৮ বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপির ছাত্র সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পাসে পযর্ন্ত ঢুকতে পারে না। একই অবস্থা হয় বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে। তখন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না। ডাকসু নিবার্চন নিয়ে পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হবেন ছাত্রদলের নেতারা এমন খবর আগেই জানা ছিল সবার। ছাত্রদলের নেতারা ক্যাম্পাসে আসছেন এ কারণে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা তা নিয়েও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকমীর্, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও গণমাধ্যম কমীের্দর কৌতূহল ছিল অনেক। কিন্তু গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়িতে করে সভাস্থল রেজিস্ট্রার ভবনে পেঁৗছান। তাদের সঙ্গে যান বিএনপি-জামায়াত সমথির্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহবায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। বেলা পৌনে ১২টায় বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল ৪টায়। যখন ছাত্র সংগঠনের নেতারা বেরোচ্ছেন তখন দেখা যায় বাইরে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকমীর্। আর ছাত্রদলের মাত্র ওই দুজন। ছাত্রদলের ওই দুই নেতাকে তখন নিরাপদে বের করার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী। ছাত্রদলের দুই নেতাকে ঘিরেছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রদলের দুই নেতার মধ্যে ছিল আতঙ্ক। বারবার তারা পেছনের দিকে দেখছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা ঘিরে রেখেই ছাত্রদলের দুই নেতাকে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের করে আনেন। সেখানে ওই দুই নেতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি অপেক্ষা করছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রদলের নেতাদের বিদায় জানান সেখানে। বিদায়ী আলাপের মধ্যেই ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। এরপরই গাড়িতে উঠে বসেন ছাত্রদলের নেতারা। বিদায় নেন ক্যাম্পাস থেকে।