আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা থাকছে না

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রপরিষদের ব্যানারে শিক্ষাথীের্দর বিক্ষোভ Ñফাইল ছবি
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে নবম থেকে ১৩ গ্রেড পযর্ন্ত অথার্ৎ আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটা পদ্ধতি না রাখার সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কোটা পযাের্লাচনা কমিটি। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কাযির্দবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরবতীের্ত আরও ৯০ কাযির্দবস সময় পায় এই কমিটি। এক মাস সময় থাকতেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা কোটা নিয়ে প্রতিবেদন সোমবার জমা দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস হলো নবম থেকে ১৩ গ্রেড পযর্ন্ত অথার্ৎ আগে যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বলা হতো, সেগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘আগে শ্রেণি বলতাম, এখন শ্রেণি বলি না। অথার্ৎ নয় থেকে ১৩ গ্রেড পযর্ন্ত যে নিয়োগ হয় সে নিয়োগে কোনো কোটাই থাকবে না। গ্রেড ১ থেকে ১৩ পযর্ন্ত, সচিব থেকে সহকারী সচিব পযর্ন্ত পদগুলোয় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলো মেধাভিত্তিক হবে।’ বিসিএস ক্যাডার পদে নিয়োগ পাওয়া এক কমর্কতার্ বলেন, বেতনক্রম অনুযায়ী বতর্মানে সরকারি চাকরিতে গ্রেড সংখ্যা ২০টি। আর বিসিএসের চাকরি নবম গ্রেডের। নবম থেকে ১৩ গ্রেড পযর্ন্ত সরকারি কমর্ কমিশন (পিএসসি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। কমিটির প্রতিবেদন কবে কাযর্কর হবেÑ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার প্রসেসটা হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবার প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমতি গ্রহণ করা হবে, অনুমোদনের পরে এটা কেবিনেটে (মন্ত্রিসভায়) উপস্থাপিত হবে। ধরেন যে নেক্সট কেবিনেট হয়তো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। কেবিনেট হলে পাস করে দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীঘির্দনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নিবার্হী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবতর্ন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমাজর্ন ও পরিবতর্ন করেছে সরকার। বতর্মানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংরক্ষিত চালু আছে। সব মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষ কোটা বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। গত ১১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্তে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের আদেশ অগ্রাহ্য করে ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। এটা করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে আদালতের পযের্বক্ষণ সম্পকের্ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। তারা বলেছেন, এটা গভনের্মন্টের যেহেতু পলিসি ডিসিশন এটা আদালতের রায়কে স্পশর্ করবে না, কোনো সমস্যা নেই। তবে নিচের গ্রেডগুলোয় আগের মতো কোটা থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা রাখার পক্ষে- এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ওটা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, আমরা বলেছি যে এখন কোটা না হলেও চলতে পারে।’ ৪০তম বিসিএসের কোটা থাকছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওটাতে বলা আছে যে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৯০৩টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। বিজ্ঞপ্তিতে কোটা নিয়ে সরকারের সবের্শষ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।