আসন বণ্টন হয়নি

আ’লীগের নিবার্চনী ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগে আওয়ামী লীগ যে ‘দিনবদলের’ নিবার্চনী ইশতেহার দিয়েছিল, মনে করা হয় সে সময় ভোটার টানতে ব্যাপক ভ‚মিকা রেখেছিল সেই ইশতেহার। দলটি বলছে, এবারও মহাজোটকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন ধরে রাখার বিশদ পরিকল্পনাসহ একটি ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে আনছেন তারা। তবে ইশতেহারের কাজ এগিয়ে গেলেও নিবার্চনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাই শুরু হয়নি শরিক দলগুলোর মধ্যে। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের শরিক দুটি দলের নেতারা জানান, আসন বণ্টনসহ মহাজোটের বেশ কিছু নিবার্চনী পরিকল্পনা আটকে আছে বিএনপি নিবার্চনে আসবে নাকি আসবে না, এর ওপর। কিন্তু নিবার্চন নিয়ে এখন ঠিক কী পরিকল্পনায় এগুচ্ছে মহাজোট? ইশতেহারেই বা ভোটার টানার মতো নতুন কী প্রতিশ্রæতি থাকবে? ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর থেকে একটানা দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। প্রথম মেয়াদে মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে দিনবদলের একগাদা প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ১০ বছরে সেসব প্রতিশ্রæতির কতটা পূরণ হয়েছে? ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কমীর্ সাথী জিন্নাতের সঙ্গে। গত ১০ বছরে মহাজোটের শাসন নিয়ে একরকম সন্তুষ্টিই প্রকাশ পায় তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘সরকার তো প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছে এবং করছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়নেও কাজ হচ্ছে। তবে কমর্সংস্থান এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে আরও নজর দেয়া দরকার ছিল।’ তবে লামিয়া হাসান নামে আরেকজন একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ‘সরকার আসলে উন্নয়নের একটা মিথ্যার মধ্যে আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন আর অবকাঠামো উন্নয়ন বলেন, এগুলো তো যুগের চাহিদা। যে সরকারই আসুক, এগুলো করতেই হতো। কিন্তু আসল জায়গায় কী হচ্ছে? দেশে কি আইনের শাসন আছে? মানুষ তো এখনো পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়। শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন যেভাবে দমন করা হলো, সেটা তো ঠিক হয়নি।’ দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে সাধারণ মানুষের কারও কারও হয়ত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আবার অনেকের মধ্যে ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। পরিবতির্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন আকাক্সক্ষা ও নতুন প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আসছে নিবার্চনে নতুন কী প্রস্তাবনা ভোটারদের সামনে হাজির করবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম। এখন সেসব উন্নয়ন দৃশ্যমাণ। আমার বিশ্বাস, জনগণ ভোটের সময় এগুলো অবশ্যই বিবেচনা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উন্নয়নের স্বণর্দুয়ারে প্রবেশ করেছি। এটা অব্যাহত রাখার বিষয় আছে। আমরা বলছি, ২০৩১ সালের মধ্যে দেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত। ২০৪১ সালে দেশ হবে সমৃদ্ধশালী।’ আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার ভাষায় দেশের চেহারা বদলে দিতে খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ১০টি খাতে আরও ব্যাপক উন্নয়নের বিশদ প্রস্তাবনা তারা নাগরিকদের কাছে তুলে ধরবেন। কিন্তু এসব প্রস্তাব ২০০৮ সালের মতো তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কতটা ভ‚মিকা রাখবে? বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক বা কোটা সংস্কার নিয়ে তরুণদের একটি বড় অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর তা দমনে সরকারের কঠোর মনোভাবের পর তরুণরা কি ব্যাপকভাবে মহাজোটকে সমথর্ন করতে পারে? মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়াকার্সর্ পাটির্র সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অবশ্য মনে করছেন, নিবার্চনে তরুণ ভোটারদের পক্ষেই পাবেন তারা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট ভোটারের প্রায় ১৫% তরুণ। সুতরাং, তরুণদের গুরুত্ব দিতেই হবে। তরুণদের ক্ষোভের পেছনে মূল কারণটা কী? সেটা হচ্ছে কমর্সংস্থান। আমরা এটার ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া কোটা সংস্কারের বিষয়টিও আশা করছি নিবার্চনের আগেই সমাধান হয়ে যাবে।’ এদিকে ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্রাথীর্ বাছাইয়ের কাজও গুছিয়ে আনছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা কতদূর? মহাজোটের শরিক জাতীয় পাটির্র কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে মহাজোটের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা শুরুই হয়নি। কিন্তু কেন? কাদের বলেন, ‘জাতীয় পাটির্ মহাজোটের কাছে ১০০টি আসন চাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না। কারণ, বিএনপি নিবার্চনে আসবে কি আসবে না, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। বিএনপি নিবার্চনে না আসলে সে ক্ষেত্রে জাতীয় পাটির্ মহাজোট থেকে বেরিয়ে ৩০০ আসনে প্রাথীর্ দেবে। আমরা সে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছি।’ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি নিবার্চনে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো দেয়া হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। অন্যদিকে এরই মধ্যে মহাজোটের বিপক্ষে কয়েকটি ছোট দলের একটি বৃহত্তর বিরোধী জোটও গঠন হয়েছে। সেখানে বিএনপির যুক্ত হওয়া নিয়েও চলছে নানান আলোচনা। যদিও একে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল জোট করেছে। ভোটের মাঠে তাদের গুরুত্ব কতটুকু, সেটা আমরা বিশ্লেষণ করছি। ভোটের মাঠে আমাদের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি। বিএনপি যদি নিবার্চনে আসে, তাহলে সেটা প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূণর্ হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব তারা নিবার্চনে আসবে। যদি বিএনপি ভোটে অংশ না নেয়, তাহলে আমার বিশ্বাস, বিএনপি থেকে একটা বড় অংশ ভিন্ন নামে অথবা অন্য কোনোভাবে নিবার্চনে আসবে।’ আওয়ামী লীগ বলছে, নতুন কয়েকটি দলের সমন্বয়ে মহাজোটের আকার বৃদ্ধি করতে দলের মধ্যে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিএনপি ভোট বজর্ন করলে মহাজোটে দলের সংখ্যা না বাড়িয়ে সেই দলগুলোকে আলাদাভাবে নিবার্চনে অংশ নেয়ার পরামশর্ দেবে আওয়ামী লীগ। বিবিসি