ঢাবিতে কোটা ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি মিছিল

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে মঙ্গলবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দ্রæত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বিক্ষোভ করেন Ñযাযাদি
কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনরতদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে তাদের পূবর্ ঘোষিত কমর্সূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তাদের মিছিলের খুব কাছেই কোটা সংস্কারের জন্য সরকার গঠিত কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর ব্যানারে পাল্টা মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার নেতারা। আর এ মিছিল চলার সময়ে একপক্ষ অন্যপক্ষকে বাধা দিয়েছে বলে উভয়পক্ষই অভিযোগ করেছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালীর প্রেসক্লাব, রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনাসহ দেশের অধিকাংশ জেলাতেই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শান্তিপূণর্ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ জেলার বাইপাস সড়কের মোড়ে জড়ো হওয়া কয়েকশ’ শিক্ষাথীের্ক পুলিশ মিছিল করতে বাধা প্রদান এবং তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার আন্দোলনকারীরা শিক্ষাথীর্রা। সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজর্ন হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মিছিল বের করে। তাদের মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। কিছুক্ষণ মিছিল করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ আবার মিছিল এভাবেই দুপুর আড়াইটা পযর্ন্ত চলে তাদের কমর্সূচি। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মিছিলকে লক্ষ্য করে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর ব্যানারে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিলও একই সময়ে বের হয় এবং পুরোসময়ই দুটি মিছিল পাশাপাশি চলতে থাকে। রাজু ভাস্কযের্র পাদদেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যখন সমাবেশ করছিল তখন ছাত্রলীগের মিছিলটি এখানকার সড়ক দ্বীপের উল্টো পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় সড়ক দ্বীপের মাঝখানে দুই পক্ষের নেতাকমীের্দর মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে উভয়পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে অল্প সময়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নেতারা তাদের বক্তব্যে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর ব্যানার ব্যবহার করে ছাত্রলীগ তাদের শান্তিপূণর্ কমর্সূচিতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করে। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার কোনো মিছিলই বের করেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা মিছিলের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, শাহবাগের গণগ্রন্থাগার এবং বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে গিয়েও সাধারণ শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে কথা বলেন। তারা তাদের তিন দফা অবিলম্বে সরকারকে মেনে নেয়ার দাবি জানায়। একই সঙ্গে তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি সব সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারেরও দাবি করেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিনটি দাবির প্রথমটি পঁাচ দফা দাবির ভিত্তিতে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, দ্বিতীয়টি নেতাকমীের্দর ওপর হামলার বিচার করতে হবে এবং তৃতীয়টি হলো তাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে সরকার গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ¯েøাগান দেয়া হয়। তাদের ¯েøাগানের মধ্যে ‘আওয়ামী লীগের সরকার বারবার দরকার, শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ’ এসব ¯েøাগান ছিল। এ সময় তারা ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য দেন এর আহŸায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নুরু, বিনি ইয়ামিন মোল্লা, মশিউর রহমানসহ অনেকেই। মশিউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে ভয়াবহ রকমের নিযার্তনের শিকার হয়েছি। আমাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হল থেকে ধরে নিয়ে তাদের কাছে থাকা ককটেল আমার হাতে দিয়ে জোরপূবর্ক স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছি। সাধারণ শিক্ষাথীের্দর স্বাথের্ আন্দোলন করেছি। কারো ব্যক্তি স্বাথের্ বা কোনো দলের কামলা খাটা কমীর্ হয়ে মাঠে নামিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। বাতিল চাইনি। যতদিন প্রজ্ঞাপন জারি না করা হবে, ততদিন আমাদের রাজপথ থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।’ আন্দোলনকারীদের প্রধান নেতা এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘মন্ত্রী পরিষদের সচিব কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে সেটি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন। আগেও তাদের কাছে প্রতিশ্রæতি দিয়ে সেখান থেকে সরে আসার চেষ্টা দেখেছেন। পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক বিনি ইয়ামিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পঁাচ দফার ভিত্তিতে আমরা ১৭ ফেব্রæয়ারি থেকে শান্তিপূণর্ কমর্সূচি পালন করলেও আমাদের ওপর একের পর এক সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আজো আমাদের মিছিলে বাধা দেয়া হয়েছে। আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। ইতিহাস থেকে এটি মোছা যাবে না। শহীদ মিনারে হামলা করে স্বাধীনতাকে অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এখন তিন দফার ভিত্তিতে কমর্সূচি পালন করছি। কমর্সূচি সরকার মেনে না নেয়া পযর্ন্ত আন্দোলন চলবে।’ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার যে অভিযো তোলা হয়েছে সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে কোনো মিছিলই ছিল না। সাধারণ শিক্ষাথীর্রা মিছিল করেছে। সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ছাত্রলীগের নেতা যোগ দিতে পারে। তবে ছাত্রলীগ কোনো কমর্সূচি দেয়নি। সুতরায় হামলার প্রশ্নই ওঠে না।