সড়ক পরিবহন বিল পাস সবোর্চ্চ সাজা ৫ বছর, হত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণে মৃত্যুদÐ

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:৩৫

যাযাদি রিপোটর্
বেপরোয়া মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুঘর্টনার ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ পঁাচ বছরের সাজার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮ বুধবার সংসদে পাস হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেছেন তাদের বলব, ২৫ বছর অপেক্ষার পর আর কত অপেক্ষা করব? আপনারাই বলছেন দুঘর্টনা ঘটছে, যানজট হচ্ছে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করেছে বলে এই বিল এসেছে। এটা ঠিক নয়। এই বিলটি দেড় বছর আগে তৈরি করা। অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার সোনালি ফসল এই সংসদে এসেছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুঘর্টনা ঘটিয়ে মানুষ মারে, তাদের বিরুদ্ধে দÐবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুতরাং শাস্তি কোনোভাবেই কম নয়।’ বিলের ওপর দেয়া বিরোধী দলের সদস্যদের চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। অন্যান্য সংশোধনী প্রস্তাবের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিলের মধ্যে সবকিছু আনার প্রয়োজন নেই। বিধি-প্রবিধান করে অনেক কিছু সংযোজন করা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সতকর্ হতে হবে এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, মাঝে মাঝে দেখি তিনজন আরোহী নিয়ে ঝঁাকে ঝঁাকে মোটরসাইকেল ছুটে চলে, হেলমেট ছাড়া। এরা বেশির ভাগই রাজনৈতিককমীর্। সুতরাং আমাদের দলগুলোকে সতকর্ হতে হবে।’ গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুঘর্টনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষাথীর্র মৃত্যু হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীর্রা আন্দোলনে নামে। তাদের দাবির পর সরকার দ্রæত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। পাস হওয়া বিলটিতে রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা আইন হিসেবে গণ্য হবে। চালকের সবোর্চ্চ পঁাচ বছর কারাদÐ প্রস্তাবিত আইনের ১০৫ ধারায় বলা আছে, এই আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মোটরযান চালাতে গিয়ে কোনো দুঘর্টনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে এ-সংক্রান্ত অপরাধ দÐবিধির-১৮৬০-এর বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দÐবিধির ৩০৪বি ধারাতে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা করে মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুঘর্টনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে ওই চালক সবোর্চ্চ পঁাচ বছরের কারাদÐে বা সবোর্চ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দÐে দÐিত হবেন। সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যু হত্যার উদ্দেশ্যে হলে শাস্তি মৃত্যুদÐ বিলের ১১৪ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীনে অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফৌজদারি কাযির্বধি প্রযোজ্য হবে। অথার্ৎ সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যু হত্যার উদ্দেশ্যে প্রমাণিত হলে তা ফৌজদারি কাযির্বধির ৩০২ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার শাস্তি মৃত্যুদÐ। বিলে আরও বলা আছে, এই আইনের অধীন অপরাধ মোবাইল কোটর্ আইন ২০০৯-এর তফসিলভুক্ত নিবার্হী হাকিমের মাধ্যমে বিচার করা যাবে। বিলের ৪ ধারাতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা মেয়াদোত্তীণর্ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে পারবেন না বা চালানোর অনুমতি দেয়া যাবে না। ৫ ধারায় বলা আছে, সড়ক পরিবহন কতৃর্পক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ গণপরিবহন চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেয়া যাবে না। ৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইনের ৪ ও ৫ ধারা লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের সাজা সবোর্চ্চ ছয় মাসের কারাদÐ বা সবোর্চ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দÐ। ৬ ধারায় বলা আছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ এবং পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না। এই ধারা কেউ লঙ্ঘন করলে তা দÐনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সরকার বা সড়ক পরিবহন কতৃর্পক্ষ জনস্বাথের্ গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এবং প্রয়োজনে নিধাির্রত পদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে সারা দেশের বা নিদির্ষ্ট কোনো এলাকা, সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার বা টানেলে যেকোনো মেয়াদের জন্য সব বা যেকোনো মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।