শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনমনে সংশয়

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
করোনা ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও সঠিক বিতরণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদিও সরকারের দাবি সুষ্ঠুভাবে করোনার টিকা প্রদানের পুরোপুরি প্রস্তুতি রয়েছে। এমনকি খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো থেকেই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। এ জন্য জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতালে ৫ থেকে ১০টি আইস-ফ্রিজার আছে, যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখা যাবে। প্রাথমিকভাবে সারাদেশে বর্তমানে ৭ হাজার ৩৪৪টি টিম ভ্যাকসিন প্রদানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করবেন। টিকা প্রাদানে কোনো অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কঠোরভাবে তা মনিটরিং করবে।

গত কয়েকদিন ধরেই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে  দেশে টিকা আসবে। চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ড-অ্যাস্টোজেনেকার তৈরি ৩ কোটি ডোজের মধ্যে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ আসবে। আর সাধারণ মানুষ টিকা পেতে আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে নির্ধারিত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এই টিকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়ার হাউস থেকে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।

তবে টিকা বিতরণ পরিকল্পনায় পরিবর্তনের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্টোজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই এক সঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এর আগে জানানো হয়েছিল,  প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সে হিসেবে প্রথমে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নতুন নিয়ম জানার পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। হঠাৎ এই নিয়ম পরিবর্তন নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবাইকে একসঙ্গে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন, যখন সীমিত সংখ্যায় টিকা আসবে, যাদের সেই টিকা দেওয়া হবে, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা। কারণ দেশে শিশুদের টিকা দেওয়ার চর্চা থাকায় এক ধরনের অভ্যস্ততা থাকলেও, বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা নেই। করোনার টিকা বয়স্কদেরই প্রথমে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কয়েক কোটি বয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়ার সময় একটি নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

তবে সরকারের এই উদ্যোগের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও এনজিও কর্মীদের প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা নিজেদের আমদানিনির্ভর টিকা দেওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে। সরকারও তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। এদিকে সরকারের বাইরে গিয়ে বেসরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে টিকা প্রদানের ব্যাপারে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর সরকারি টিকা ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থাহীনতা নাকি সহযোগিতা এ নিয়ে জনমনে এক ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এছাড়া দেশের বাজারে বেসরকারিভাবে টিকা এলে তার মান, মূল্য নির্ধারণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা কী হবে সে ব্যাপারেও মতভেদ তৈরি হয়েছে। এসবের ফলে একশ্রেণির মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকার মনোভাব লক্ষ করা গেছে। এতে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার সাফল্য অর্জনের ব্যাপারে সরকারের চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকার শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা দেশে আনার অনুমতি দিয়েছে। ভারত থেকে এই টিকা আনবে বেক্সিমকো ফার্মা। তবে সরকারের এই উদ্যোগের পাশাপাশি রাশিয়ার সরকার বাংলাদেশে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের করোনার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকার রুশ দূতাবাস এ বিষয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও একই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ব্র্যাক ইতোমধ্যে সরকারের কাছে আবেদনও করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কর্মীরা কর্মসূত্রে এদেশে অবস্থান করছেন। তাদের করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের দিকে না চেয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে টিকা আনার চেষ্টা করছে। তবে কবে নাগাদ সেই টিকা আসবে, কীভাবে আসবে, কীভাবে দেওয়া হবে, তা তাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে টিকা ব্যবস্থাপনা কী হবে, অর্থাৎ কোথায় টিকা রাখা হবে, ঠিক তাপমাত্রায় রাখা হচ্ছে কি-না, কারা দেবে বিষয়গুলো সরকারকে জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত টিকা দেওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে তাও অধিদপ্তরের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। আর এসব বিষয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে