মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

'দোয়া মাহফিল' ঘিরে ধোঁয়াশা

এই দোয়া মাহফিল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নানামুখী আলোচনা আছে। উভয় দলই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে
হাসান মোলস্না
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৩
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ডাকে শনিবার অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ঘিরে রাজনৈতিক মহলে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ বিশেষ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এমন একটি দোয়া মাহফিলকে অনেকে রহস্যজনক হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে মনে করছেন ষড়যন্ত্র। কেউ ধারণা করছেন, এটি সরকারবিরোধী সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা হতে পারে। নানা কারণে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলতে চান না। সব মিলিয়ে এই দোয়া মাহফিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল বাড়ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গত শনিবার হঠাৎই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন সৈয়দ ইবরাহিম। দোয়া মাহফিলের মূল বিষয়বস্তু ছিল, '২০২০-এর জন্য মহান আলস্নাহর প্রতি শোকরিয়া ও ২০২১ সালের জন্য মহান আলস্নাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা।' রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আড়ম্বরপূর্ণ এ দোয়া মাহফিলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষনেতাকে পাশাপাশি সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি ও সাবেক বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কল্যাণ পার্টির উদ্যোগে এত মানুষের অংশগ্রহণে এমন একটি অনুষ্ঠান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় থাকা এসব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এর পেছনে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক সংগঠনের যুক্ততা থাকতে পারে। গত ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় যারা সরকার পতনের দাবিতে যে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল এর দ্বিতীয় পর্ব এটি। এ ছাড়া ১/১১-এর মতো আরেকটি পরিস্থিতির তৈরি ষড়যন্ত্র অংশ হিসেবে এই দোয়া মাহফিল হয়েছে এমন গুঞ্জনও ছিল। এমন আলোনাও আছে, ২০১৯ সালে নভেম্বরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধী একটি পস্নাটফর্মের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে ২০-দলীয় জোট, ঐক্যফ্রন্টের ২-১ জন শীর্ষ নেতা ছাড়াও সুশীল সমাজের কয়েকজন ছিলেন। সেইসব ব্যক্তিই ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে প্রথম কর্মসূচি করেছে আর গত শনিবার দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে দ্বিতীয় কর্মসূচি করল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দোয়া মাহফিল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নানামুখী আলোচনা আছে। বিষয়টি উভয় দলই পর্যবেক্ষণ করছে। এর কারণ হচ্ছে প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলে উদ্বেগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে মূলধারার বিএনপির বাইরে গিয়ে অন্য সব রাজনৈতিক দল নিয়ে সরকারবিরোধী একটি বৃহৎ পস্ন্যাটফর্ম গঠনে চেষ্টা হচ্ছে এমন আলোচনা থাকায় বিএনপিও তাদের কার্যক্রমে বিশেষ নজর রাখছে। বিএনপি সূত্রমতে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মাইনাস করে একটি সরকার বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এমন তথ্য আছে দলের কাছে। ১৪ ডিসেম্বরের আগে এ বিষয়ে কিছু প্রমাণও দলের হাইকমান্ডের কাছে যায়। সঙ্গত কারণে ১৪ ডিসেম্বর গুলিস্তান-পল্টনে বিক্ষোভে যেতে বিএনপির নেতাদের নিষেধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিল তাদের শোকজও করা হয়। কিন্তু এসব নেতা পরে হাইকমান্ডকে বোঝাতে সক্ষম হন তারা কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। সঙ্গত কারণে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। সন্দেহ একেবারে দূর হয়নি। আর সর্বশেষ গত শনিবারের দোয়া মাহফিলের বিষয়ে বিএনপিতে যেমন হতাশা নেই তেমনি উচ্ছ্বাসও নেই। আলোচনায় থাকা নেতাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই দোয়া মাহফিল ঘিরে রাজনৈতিক মহলের আলোচনার বিষয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যায়যায়দিনকে বলেন, কল্যাণ পার্টি ২০-দলীয় জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির আমন্ত্রণে তারা যেমন সাড়া দেন তেমনি বিএনপি তাদের কোনো আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে থাকে। এ কারণেই দোয়া মাহফিলে গিয়েছিলেন। এর বাইরে আর কোনো বিষয় আছে কিনা তা তার জানা নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের এই দোয়া মাহফিলে দেখে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনৈতিকভাবে যা যা করণীয় তা তারা করবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান রোববার সন্ধ্যায় যায়যায়দিনকে বলেন, দোয়া মাহফিলের নামে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া ভন্ডামি। দেশে একটি সংবিধান আছে। সরকার পরিবর্তনের উপায় সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে। সে নিয়ম বাদ দিয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করাই ষড়যন্ত্র। যারা কথিত ওই দোয়া মাহফিলে ছিল তাদের সবাই চেনে। অতীতেও তাদের সংঘবদ্ধভাবে দেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে দেখেছি। বাংলাদেশে এসব ভন্ডামি করে আর কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। হঠাৎ এমন রাজনৈতিক দোয়া মাহফিলের কারণ জানতে সৈয়দ ইবরাহিমকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক মহলের নানামুখী আলোচনার বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ষড়যন্ত্রের কিছু তিনি দেখছেন না। দুঃশাসন থেকে মানুষ যাতে মুক্তি পায় সেজন্য মহান আলস্নাহর কাছে দোয়া করা হয়েছে। এ বিষয়ে অপপ্রচার করে মানুষকে যারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তারা তাদের দায়িত্বে করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে