বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান

সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে সতর্কতা

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান সামনে রেখে দেশটিতে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সশস্ত্র তান্ডব চালাতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির সবগুলো অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা গত ৬ জানুয়ারি বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের দিনে ট্রাম্প সমর্থকদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার মতো প্রাণঘাতী ঘটনার পুনারাবৃত্তি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওই দিন কংগ্রেসের পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থকের হামলায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। কয়েক ঘণ্টার জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা ক্যাপিটল ভবন। পরে লাঠি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরালে পুনরায় অধিবেশন শুরু হয়। ওই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহে উসকানি' দেওয়ার অভিযোগ এনে তাকে অভিশংসিত করে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের আগেও ট্রাম্প সমর্থকরা দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিবাদ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাইডেনের অভিষেক সামনে রেখে ট্রাম্প সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যের রাজধানীতে সশস্ত্র মিছিল নিয়ে নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে ফেডারেল বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এমন পরিস্থিতিতে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান সামনে রেখে সারা দেশ থেকে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনলাইনে ট্রাম্পপন্থী ও কট্টর ডানপন্থী নেটওয়ার্কগুলোর করা পোস্টে সোমবার সশস্ত্র বিক্ষোভ এবং অভিষেকের দিন বুধবার ওয়াশিংটন ডিসি অভিমুখে যাত্রার ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ওই সব কর্মসূচির ডাক পুলিশের ফাঁদ হতে পারে এবং কঠোর নিরাপত্তার বিষয়টি উলেস্নখ করে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী অনুসারীদের এগুলোতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে। তবে ওই পোস্টকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় যেসব রাজ্যে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান শিবিরে বৈরিতা দেখা গেছে, সেগুলোতে সহিংসতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মিশিগান কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ছয় ফুট নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছে। ওয়াশিংটন পুলিশের পরিচালক জো গ্যাস্পার শুক্রবার বলেন, অন্তত ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এই ভবন ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এদিকে, নিউ মেক্সিকো ও উটাহ রাজ্যের গভর্নররা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ও উইসকনসিনসহ অনেক রাজ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করছে। টেক্সাস শনিবার থেকে বাইডেনের অভিষেকের পর পর্যন্ত রাজ্যটির পার্লামেন্ট বন্ধ রাখছে। টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক বলেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে 'সহিংস উগ্রপন্থিরা' ঢুকে যেতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'মনে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি যদি এখানে আসার বা ওয়াশিংটনে যাওয়ার চিন্তা করেন তাহলে এখনই তা বাদ দিয়ে ঘরে ফিরে যান। আপনাকে এখানে স্বাগত জানানো হবে না এবং আপনাকে আমাদের দেশের রাজধানীতেও স্বাগত জানানো হবে না।' বাইডেনের টিম যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে রাজধানীতে না আসার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়রসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা জনগণকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান দূর থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।