যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল

সশস্ত্র পাহারায় জো বাইডেন শপথ নিচ্ছেন আজ

শপথ নেবেন কমলা হ্যারিসও

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জো বাইডেন কমলা হ্যারিস
নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও সশস্ত্র পাহারার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। এদিনের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সম্ভাব্য হামলা এড়াতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে মোতায়েন রাখা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজারের বেশি সদস্য। এছাড়া অন্যান্য বাহিনী তো থাকছেই। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টের শপথে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বছর প্রথমত করোনাভাইরাসের আঘাত, তার ওপর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের আগ্রাসী মনোভাবে বাধ্য হয়েই একেবারে ছোট পরিসরে আয়োজন করতে হচ্ছে অভিষেক অনুষ্ঠান। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি স্থানীয় সময় বুধবার (আজ) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হবে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ১০টায় শপথ নেবেন বাইডেন। এছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কমলা হ্যারিসও। এদিকে, শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটনকে। শহরটির বেশিরভাগ রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর \হপাশাপাশি কর্তৃপক্ষ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত 'ন্যাশনাল মল'ও বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকে শহরে প্রবেশের সেতুগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতা থেকে রক্ষার জন্য হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা পুরো এলাকায় অবস্থান করছে। আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য যোগাযোগ পরিচালক কেইট বেডিংফিল্ড বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম পাশে বাইরের দিকে বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেবেন।' তিনি আরও বলেন, 'বাইডেন এবং তার দল ড্রেমাক্রেটিক পার্টির মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিরাপদ কিনা, তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে।' সাধারণত অভিষেকের দিন সকালেই নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে পৌঁছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে অভিষেক অনুষ্ঠানে যান। কিন্তু, এবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাবেন না। এ কারণে এদিন সকালে শপথের আগে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউস ভ্রমণ শেষে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে পৌঁছালেই শুরু হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে শপথবাক্য পাঠ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর রীতি মেনে অভিষেকের বক্তব্য রাখেন। ১৯৩৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে প্রার্থনার নিয়ম চলছে। অনেক সময় নতুন প্রেসিডেন্টের পরিচিত যাজকরাই এটি করে থাকেন। এরপর কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান প্রেসিডেন্ট। পরে মিছিল নিয়ে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান তিনি। সেখানে অভিষেক উপলক্ষে পার্টিতে যোগ দেন নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি। কিন্তু এ বছর অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন একেবারে সীমিত করে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে জানা গেছে, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার মিছিলটি হবে ভার্চুয়াল। হচ্ছে না কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ। বাদ অভিষেক পার্টিও। যুক্তরাষ্ট্রের ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও যেখানে তারকা উপস্থিতি দেখা যায়, সেখানে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন না, তা কি করে হয়? বাইডেনের অভিষেকে পার্লামেন্ট ভবনের অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলোকিত করতে উপস্থিত থাকবেন একঝাঁক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ইউএস ক্যাপিটলের পশ্চিম ভাগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত গাইবেন পপ তারকা লেডি গাগা। এরপর একটি 'মিউজিক্যাল পারফরম্যান্সে' অংশ নেবেন গায়িকা-অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ। এতে আরও অংশ নেবেন সংগীতশিল্পী জাস্টিন টিম্বারলেক, জন বন জোভি, ডেমি লোভাটো এবং অ্যন্ট ক্লেমনস। বাইডেনের শপথগ্রহণ উপলক্ষে ৯০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন দুইবার অস্কার বিজয়ী অভিনেতা টম হ্যাংকস। অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো ইঙ্গিত নেই : পেন্টাগন প্রধান এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগে অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দেশটির অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার। পেন্টাগনের (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) এই অস্থায়ী প্রধান সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের অভিষেক ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে ভবনের সুরক্ষায় সহায়তা করতে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড (অতীত) পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, আর এই কাজে এফবিআই সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করছে।' তিনি আরও বলেন, 'যদিও আমাদের কাছে অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই তারপরও বড় ধরনের নিরাপত্তা ইভেন্টের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা স্বাভাবিক, রাজধানীকে সুরক্ষিত করতে কোনো পাথরই উল্টে দেখতে বাকি রাখছি না আমরা।' উলেস্নখ্য, গত ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিল। ওই ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন ও মার্কিন আইনপ্রণেতারা আত্মরক্ষার্থে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হন। ওই ঘটনার জেরে পার্লামেন্ট ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।