অভিবাসীদের বৈধ করতে বড় উদ্যোগ বাইডেনের

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন আজই জো বাইডেন নতুন অভিবাসন আইনের প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করেছেন, যা বাস্তবায়িত হলে দেশটিতে বসবাসরত এক কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীর আট বছরের মধ্যে বৈধ হওয়ার পথ খুলবে। আর এর মধ্যদিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি বদলে দিতে জো বাইডেনের প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। সংবাদসূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি আজ বাইডেনের অভিষেকের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝঞ্ঝামুখর চার বছরের মেয়াদের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নীতি \হবদলে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতি করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে থেকেই দিয়ে আসছিলেন বাইডেন। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনের নিয়ম বদলাতে তৎপর হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। সে সময় সাতটি মুসলমান প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মেট ১৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কড়াকড়ি চলছে। তার উত্তরসূরি বাইডেন দায়িত্বের প্রথম দিনই সাত মুসলমান দেশের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন নির্বাহী আদেশ দেবেন বলে তার হবু 'চিফ অব স্টাফ' রন ক্লেইন আগেই জানিয়েছিলেন। এছাড়া অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে কাজ শুরু করেছিলেন, তা আর এগিয়ে নেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন বাইডেন। তার বদলে সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি। বাইডেনের নতুন অভিবাসন আইনের প্রস্তাব আজই কংগ্রেসে পাঠানো হবে। মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসনের মূল কারণগুলো খতিয়ে দেখার ওপর জোর দেওয়া হবে সেখানে। বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নতুন অভিবাসন নীতির কেন্দ্রে থাকবে আট বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনিবন্ধিত তবে যোগ্য অভিবাসীদের পাঁচ বছরের জন্য একটি অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হবে। এর মধ্যে তাদের অতীত বা 'ব্যাকগ্রাউন্ড' পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি নিয়মিত কর দেওয়াসহ অন্যান্য শর্ত পূর্ণ করা হলে পাঁচ বছর পর তাদের গ্রিন কার্ড দেওয়া হবে। এর তিন বছর পর তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন্তত চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারাই ওই আবেদনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। শৈশবে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তারা 'ড্রিমার্স অ্যাক্টের' আওতায় এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বা দুর্দশায় থাকা দেশ থেকে আসা নাগরিকরা 'টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস প্রোগ্রামের' আওতায় এখনই গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এদিকে, বাইডেনের এই পরিকল্পনা ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতা ও অধিকারকর্মীদের প্রশংসা পাচ্ছে। তবে নতুন এই আইন বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের আদেশ খাটছে না এদিকে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশ আর খাটছে না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ এবং ব্রাজিলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আদেশ দিলেও বাইডেন প্রশাসন ওই নিষেধাজ্ঞা জারি রাখবে। গত সোমবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক ডিক্রি জারি করা হয়। ওই ডিক্রি অনুযায়ী, আগামী ২৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় দিন পর ওই বিধিনিষেধ উঠে যাবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাইডেনের মুখপাত্র জেন সাকি এক টুইট বার্তায় বলেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সময় এখন নয়। গত বছরের মার্চে ইউরোপের ওপর এবং মে মাসে ব্রাজিলের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা ছিল। এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ডিক্রি জারির পর তাৎক্ষণিকভাবে একটি টুইট করেছেন জেন সাকি। তিনি বলেন, 'আমাদের মেডিকেল টিমের পরামর্শ অনুযায়ী, ভ্রমণ বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করতে চায় না বাইডেন প্রশাসন। প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে ঘিরে জনস্বাস্থ্যের বিধিগুলো আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছি আমরা।' সাকি আরও বলেন, 'সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণের নতুন ধরন আভির্ভূত হচ্ছে। তাই এখনই আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সময় আসেনি।' তার এই টুইটের কয়েক মিনিট আগে হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইউরোপের শেনজেন এলাকা ও ব্রাজিলের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট। আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে চীন ও ইরানের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে বলে ওই ডিক্রিতে উলেস্নখ করা হয়েছে।