শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিরো পয়েন্টেই থাকছে জিপিও

রেজা মাহমুদ
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক বাক্সের আদলে গড়া ১৪ তলা নতুন ডাক ভবন তৈরি শেষ হলেও জিপিও স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনেকটাই মন্থর। তবে নতুন ডাক সদর দপ্তরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাপরিচালকের দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দুই বিভাগ। এদিকে কয়েক দফা সংশোধনের পর ২০১৯ সালের অক্টোবরের মধ্যে জিপিও স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ডাক অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, জিপিও স্থানান্তরে রয়েছে বেশ কিছু মৌলিক জটিলতা, ফলে জিরো পয়েন্টেই থাকতে পারে জিপিও!

সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালকের সময় এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে অনেক বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বর্তমান ডিজি। তবে নতুন ডাকভবনে পুরো জিপিও স্থানান্তরে কোনো সুযোগ নেই বলে যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন ডাক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন। নতুন ডাক ভবনে ডিজির কার্যালয় ও তার অধীনে থাকা ডাক জাদুঘর, লাইব্রেরি ও অপারেশনাল দুটি বিভাগ স্থানান্তর করা হবে। তবে জিপিও'র ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবা হচ্ছে।

১৮৯৮ সালের পোস্ট অফিস অ্যাক্টকে আত্তীকরণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর ডাক অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকার গুলিস্তানে ১৯৬২-৬৩ সালে ডাক বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় তিন তলা জিপিও ভবন, যার পাশেই ছিল ডাক অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়।

তবে ডাক বিভাগের প্রধান দপ্তর হিসেবে

'ঢাকা ১০০০' অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট এটি ব্যবহৃত হয়ে এলেও কাজের পরিধি বেড়েছে বহুগুণে। ১৪ একর জায়গায় এ জিপিও ভবন থাকলেও আকার তুলনামূলক বেশ ছোট।

সংস্থাটির বিভিন্ন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মহাপরিচালকের দপ্তর ও ডাক জাদুঘরসহ ১৩টি অপারেশনাল বিভাগ এখানে সেবা প্রদান করেছে। অন্যদিকে প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা- কর্মচারী ও অসংখ্য গ্রাহকের ভিড় আছেই। ফলে স্থান সংকুলান ও স্বাভাবিক ডাক সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় আধুনিক ডাক সেবা প্রদান অসম্ভব বলেও মনে করেন অনেক কর্মকর্তা।

এদিকে সংস্থাটির বড় একটি অংশ আগারগাঁওয়ে যেতে চায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে ডাকবিভাগের কয়েকটি সূত্র বলছে, নতুন ভবনে পুরো জিপিও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সেখানে ১টি ১৪ তলা ভবনে প্রায় তিন হাজার কর্মীর স্থান সংকুলান হবে না। এছাড়া আনসারসহ বেশকিছু কর্মীর আবাসন সুবিধাও দেওয়া যাবে না। এদিকে মহাপরিচালকের দপ্তরেই রয়েছে ৬০ জন বিসিএস ক্যাডারসহ প্রায় ৩শ' কর্মকর্তা-কর্মচারী। ডাক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ডিজির দপ্তর, মেট্রোপলিটন সার্কেল ও ঢাকা সার্কেলের সঙ্গে জাদুঘর ও সেন্ট্রাল সার্ভার নতুন ডাক ভবনে স্থানান্তর করা হলে বাকিরা অর্থাৎ আরও ১১টি অপারেশনাল ডিভিশন কোথায় যাবে।

এদিকে বর্তমান জিপিও ভবন ভেঙে এই ১৪ একর জায়গায় সবুজ উদ্যান করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেকের সভায়। তাহলে জিপিও ঠিকানা কোথায়। আর যদি স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডাক অধিদপ্তরের জন্য নতুন ডাক ভবন নির্মাণ করা হয় তাহলে এই ভবনে (নতুন) স্থান সংকটইবা কেন হবে। এছাড়া নতুন ভবনে যেতে কেন এত সময় নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, অনেক সিদ্ধান্ত বিষয়ে তিনি জানেন না, অর্থাৎ ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক যে, আধুনিক ডিজিটাল ডাক সেবা নিশ্চিত করতে হলে কর্মীদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে এ ভবন বেশ পুরনো; কিন্তু ডাকের সেবার পরিধি বেড়েছে। তাই বিকল্প ভবনের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ডাক বিভাগের সব সেবা পেপার লেস করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার আর তাই সেন্ট্রাল সার্ভার জাদুঘর আধুনিকীকরণ করা ও মানসম্মত সমৃদ্ধ লাইব্রেরি করার লক্ষ্যেই আগারগাঁওয়ে নতুন ডাক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেখানে বরাদ্দকৃত জায়গা চাহিদার তুলনায় কম, তাই সেখানে ২টি বিভাগ, জাদুঘর, লাইব্রেরিসহ মহাপরিচালকের দপ্তর নেওয়া হচ্ছে।

এসব কারণেই ভবন তৈরি হওয়া সত্ত্বে স্থানান্তর প্রক্রিয়া দেরি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কারণগুলোর কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে তবে এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। ডাক বিভাগ তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে বর্তমান জিপিও স্থানান্তরে কিছুটা জটিলতা থাকায় পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে।

মহাপরিচালক জানান জিপিওর ক্ষেত্রে তার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়। আন্তর্জাতিক পোস্ট অফিস অ্যাক্ট অনুযায়ী যেকোনো এলাকার ঠিকানা নির্ধারণ করা হয় পোস্ট কোড দিয়ে। বর্তমান জিপিও তাই ঢাকার জিরো পয়েন্টে রয়েছে অর্থাৎ ঢাকা ১০০০ পোস্ট কোড। আর জিরো পয়েন্টে থেকে জিপিও সরিয়ে ঢাকা ১২০০ কিংবা ১২০৫ করা হলে জিপিওর মৌলিকতা থাকবে না। যেহেতু এখানে পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাই জিপিওর জন্য ঢাকা ১০০০ এলাকায় অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট এলাকায় ২ একর জমি খুঁজছে সরকার। জমির বরাদ্দ পেলেই সেখানে ৮ তলা ভবনসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানায় সংস্থাটির এ শীর্ষ কর্মকর্তা।

তবে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ২ একর জমি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে কোনো জমির সন্ধান পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা ঠিক যে, গুলিস্তানের মতো এলাকায় ২ একর জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন, তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সম্ভবত বর্তমান ঠিকানার ১৪ একর জায়গা থেকে ২ একর জায়গা ডাক অধিদপ্তরকে জিপিও ভবন নির্মাণে বরাদ্দের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তাহলে ডিজিটাল ডাক ব্যবস্থা ও সেবার মান আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

ডাক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৪টি জিপিও, ৬৮টি প্রধান ডাকঘর, ৪২০টি উপজেলা ডাকঘর, ৯২৩টি সাব-পোস্ট অফিস, ১১টি বিভাগীয় শাখা অফিস রয়েছে। দেশে এজেন্সি পোস্ট অফিস রয়েছে ৮ হাজার ৪৬০টি, যার মধ্যে অবিভাগীয় সাব-পোস্ট অফিস ৩২২টি এবং অবিভাগীয় পোস্ট অফিস ৮ হাজার ১৩৮টি। সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘরের মাধ্যমে দেশব্যাপী পোস্টাল সেবা প্রদান করে আসছে ডাক অধিদপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে