বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জল্পনা-কল্পনা শেষে টিকা আসছে আজ

জাহিদ হাসান
  ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

দেশে করোনা টিকার আমদানি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে চলা নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ (বৃহস্পতিবার) আসছে টিকার প্রথম চালান। ভারত সরকারের প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা দুপুরে ঢাকায় পৌঁছবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা গ্রহণ করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এছাড়া গতকাল ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, উপহারের ২০ লাখ টিকা ছাড়াও এদিন ভারত থেকে করোনাভাইরাসের আরও ১৫ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই টিকা আমদানির মধ্য দিয়ে করোনা মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেগুলোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। তবে তারা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার দ্রম্নত সুষম বণ্টন নিশ্চিতে বেশকিছুু সংকটের কথাও বলছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় প্রথম দফায় সারাদেশে আশি বছরের ঊর্র্ধ্বে ১৩ লাখের বেশি মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। যাদের অধিকাংশই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অবস্থান করছেন। কিন্তু গতকাল আকস্মিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ায় প্রথমে রাজধানীকেন্দ্রিক হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। এতে করে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি (সোমবার) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ২৫তম সভায় তারা সরকারকে বলেছে, করোনার টিকাগ্রহীতাদের নিবন্ধন কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো দরকার। কমিটি আরও বলেছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ

করতে হবে। পাশাপাশি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। মূলত নিবন্ধন কার্যক্রমে ধীরগতিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের টিকাদান পিছিয়ে পড়বে। ফলে টিকাদানের ক্ষেত্রে এক ধরনের সংকটও তৈরি হতে পারে।

এদিকে, করোনার টিকা বিষয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুরে ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের উপহারের টিকা বাংলাদেশে আসবে। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনারসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

সচিব জানান, টিকাগুলো সংরক্ষণ করা হবে তেজগাঁও ইপিআই স্টোরে। ইতোমধ্যেই স্টোরে সংরক্ষণের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে ২৫ জানুয়ারি। ভারতের শুভেচ্ছা উপহারের ২০ লাখ ও বাংলাদেশ সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ মিলিয়ে মোট ৭০ লাখ টিকার মধ্যে প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। এভাবে দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ এবং তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম মাসের ৬০ লাখের দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ব্যক্তিরা ফের তৃতীয় মাসে পাবেন।

সভায় জানানো হয়, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। প্রথম দিনে ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্ট লাইনে যারা কাজ করছেন তারা পাবেন। পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২০ থেকে ২৫ জন নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে। করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পরবর্তী দিনে ড্রাই রান অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে চারটি হাসপাতাল ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এগুলো হলো, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। এ চারটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়ার টার্গেট হাতে নেওয়া হয়েছে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। এরই মধ্যে বেক্সিমেকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী টিকা জেলাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ এর আগে গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক মো. শামসুল হক বলেছিলেন, দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে স্থানীয় মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনাতেও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাকেন্দ্র করার কথা বলা আছে। কিন্তু ১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো টিকা দেওয়া হবে না। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে বা গ্রামে কোনো টিকাকেন্দ্র না হলে গ্রামের মানুষকে উপজেলা সদর বা জেলা সদরে টিকা নেওয়ার জন্য আসতে হবে। কিন্তু বয়স্ক মানুষের এ ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, টিকা দেওয়ার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ে কেন্দ্র সম্প্রসারণ করা হবে।

এদিকে গতকালের সভায় স্বাস্থ্যসচিব আরও জানান, সম্ভাব্য আগামী ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পরে সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। টিকা সংরক্ষণের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে