শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

'দখল' অজুহাতে আটকা ডিএনসিসির সৌন্দর্যবর্ধন

হাসান আরিফ
  ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) খালি জায়গা আর পরিত্যক্ত থাকবে না। এসব জায়গা আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের মাধ্যমে সবুজায়ন ও নান্দনিক করা হবে। এ জন্য সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৭৯ কোটি টাকা। উন্নয়নে গুণগত মান বা কোয়ালিটি এবং ব্যয় সংকোচন পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, উন্নয়নের তুলনায় ব্যয়ই বেশি হচ্ছে।

উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের প্রতিটি খালি জায়গাতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয়, ক্লার, মাদ্রাসার রান্নাঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করে দখল করে রাখা হয়েছে। একইভাবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের স্থাপনার জন্যও দখল হয়ে আছে। ফলে ২০১৯ সালে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও তা পরিকল্পনাতেই রয়ে গেছে। এমনকি ঠিকাদারকেও কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ঢাকা উত্তর সিটির সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুন মাসে। এরপর এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। এখন আবারও এই মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন এলাকা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এবং পার্কে ভারি খেলনা বসানোর

তালিকা বাদ দেওয়া হয়েছে। এজন্য আরও এক বছর সময় চেয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন। নতুন প্রস্তাবে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত উন্নয়নের বৃহত্তম অংশ এবং ভারি যন্ত্রাংশ বাদ দেওয়ায়, প্রকল্পের সামান্য অংশই অবশিষ্ট রয়েছে। এই বৃহত্তম অংশ বাদ দেওয়ার পরও টাকার অংকে বাদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা অযৌক্তিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কাজ দৃশ্যমান না হলেও এরই মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে ৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে তাদের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ৫ কোটি ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন সংশোধিত প্রস্তাবে এই চুক্তির বাইরে আরও ১ কোটি ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সময় বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দাবি, কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। এরপর কনসালট্যান্ট প্রতিটি পার্কের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে পার্কগুলোর ডিজাইন চূড়ান্ত করে। এতে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হয়। প্রতিটি স্থানেই রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয়, ক্লারঘর, মাদ্রাসার রান্নাঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা থাকায় ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পার্কের ডিজাইনে কিছু সামগ্রী আমদানি করতে ঠিকাদারের অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে দুই মাস কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অনুমোদিত প্রকল্পের ২৬টি পার্কের মধ্যে বারিধারা পার্কটি বারিধারা সোসাইটি কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন করবে। ফার্মগেট আনোয়ারা উদ্যান মেট্রোরেল সাইড স্থাপন, ফার্মগেট ত্রিকোণ পার্ক মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে এবং মালিকানা জটিলতায় মিরপুর গুদারাঘাট পার্কটির উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তাই এই চারটি পার্ক বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪টি কসাইখানা নির্মাণ উন্নয়নের মধ্যে মিরপুরে বর্তমান কসাইখানাটি অত্যন্ত স্বল্প জায়গা নিয়ে অবস্থিত, যা একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়েছে। তাই এটাও বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪টি কবরস্থানের মধ্যে ২টি (উত্তরা সেক্টর ১২ এবং উত্তরা সেক্টর ১৪) কবরস্থান ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন করা হয়েছে। তাই এই দুটিকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।

আব্দুলস্নাহপুর হতে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তায় বাস রেপিড ট্রান্সপোর্ট (বিআরটি) এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে ফুটওভার ব্রিজগুলো স্থানান্তর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে এই রাস্তায় ১৫টি ফুট ওভার ব্রিজের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বর্তমানে ডিএনসিসি কর্তৃক স্পন্সরশিপের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করানো হচ্ছে। তাই সংশোধিত প্রকল্প থেকে এই আরও ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে।

উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, প্রকল্প তৈরির সময় ধারণাভিত্তিক ব্যয় বিবেচনা করে প্রতিটি পার্ক বা প্যাকেজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ করার পর প্রতিটি পার্কের বিস্তারিত জরিপ শেষে ব্যবহারকারীদের মতামত নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা চূড়ান্ত করে। এতে কিছু কিছু পার্কের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রকল্পে উলেস্নখ করা ব্যয় থেকে কম/বেশি হয়। যা সংশোধিত প্রস্তাবে সমন্বয় করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পে একাধিক পার্ক কিংবা মাঠ নিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান একইসময় সংশ্লিষ্ট প্যাকেজভুক্ত সবগুলো পার্ক কিংবা মাঠের ড্রইং এবং ব্যয় দেখায়নি। তাছাড়া পার্ক কিংবা মাঠগুলোর ভৌগোলিক অবস্থানও ভিন্ন। এতে একজন ঠিকাদারের পক্ষে একাধিক পার্ক বা মাঠের কাজ দ্রম্নত শেষ করা সম্ভব না। তাই কাজ দ্রম্নত বাস্তবায়ন করার স্বার্থে সংশোধিত প্রস্তাবে কিছু কিছু প্যাকেজকে একাধিক লট এ বিভক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, উন্নয়নের আওতায় ১৮টি পার্ক এবং ৪টি খেলার মাঠে ব্যায়ামাগার, সাইকেল লেন, শিশুদের জন্য পেস্নয়িং জোন এবং পাবলিক টয়লেট সুবিধা থাকবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও থাকবে। তবে পেস্নয়িং জোনের ভারি খেলনা বসানোর পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভৌত কাজ করা হয়েছে, এতে পরামর্শক ব্যয় বেড়েছে এটা ঠিক। তাই এই বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। আর সার্বিক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে