বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পনীতি বদলাতে কাজ শুরু জো বাইডেনের

প্রথমদিনেই ১৫ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান কিছু নীতি বদলাতে শুরু করেছেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস থেকে এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, 'যে সংকটগুলোর মুখে আমরা পড়েছি, তা মোকাবিলার ক্ষেত্রে নষ্ট করার মতো সময় নেই।' সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই যে ১৫টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বাইডেন, এর মধ্যে করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের আরও তৎপর হওয়ার বিষয়টি প্রথমে রেখেছেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য আদেশের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানও উল্টে দিয়েছেন তিনি। এই নির্বাহী আদেশগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুতর ক্ষতিগুলো উল্টে দিতেই নয়, পাশাপাশি আমাদের দেশের এগিয়ে যাওয়া শুরু করতেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন পদক্ষেপ নেবেন।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের সব দপ্তর ও স্থাপনায় মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হবে। মহামারি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো সমন্বয় করতে নতুন একটি দপ্তর স্থাপন করা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করবে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, ডবিস্নউএইচওর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আবারও যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। মহামারি মোকাবিলায় সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ', তিনি এমনটি বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তার প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন বাইডেন। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন তিনি। গত বছর এই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিতর্কিত 'কিস্টোন এক্সএল' পাইপলাইনের ক্ষেত্রে দেওয়া প্রেসিডেন্টের অনুমোদনও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী ও পরিবেশবাদীরা এক দশকের বেশি সময় ধরে এই অনুমোদনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি বলেন, প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে আজ ফোন করবেন বাইডেন, তখন কিস্টোন পাইপলাইনের বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি বেসরকারি অর্থায়নে নির্মাণের কথা ছিল। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল আট বিলিয়ন ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে কানাডার আলবার্টা থেকে দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল ভারী অপরিশোধিত তেল নেব্রাস্কায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস অনুমোদন দিলেও তাতে ভেটো দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়েছিলেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাইডেন মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল নির্মাণে তহবিল ছাড়ে সহায়তা করা ট্রাম্প প্রশাসনের 'জরুরি ঘোষণা' বাতিল করেছেন। পাশাপাশি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের ওপর আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার অন্যান্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। বিভক্তির বিপরীতে ঐক্য জিতেছে অভিষেক ভাষণে বাইডেন এদিকে, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই অভিষেক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' কিংবা 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির মর্মমূলে আঘাত হানলেন। দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ মার্কিনিদের ভোট জিততে বিভক্তির সূত্রে ট্রাম্প তাদের বিপরীতে শত্রম্ন হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন মুসলমান অভিবাসী আর মেক্সিকানদের। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের সেই বিদ্বেষী রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে বাইডেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বারবার বিভক্তির বিপরীতে ঐক্য জিতেছে। ক্ষোভ, ঘৃণা, উগ্রবাদ, বিচারহীনতা, সহিংসতা, রোগ, বেকারত্ব আর হতাশা কাটিয়ে উঠতে মার্কিন জনগণের ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন বাইডেন।' তিনি বলেন, 'ঐক্যের মাধ্যমে আমরা মহৎ কিছু করতে পারি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারি।' ট্রাম্প জমানার অবসান ঘটিয়ে শপথ নেওয়ার পর দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাইডেন বলেন, 'তার হৃদয়জুড়ে ঐক্যের প্রতিধ্বনি। জানি যে শক্তি আমাদের বিভক্ত করেছে, তা গভীর আর সেগুলো বাস্তব। কিন্তু এটাও জানি, এগুলো নতুন নয়। আমাদের ইতিহাস হলো, মার্কিন আদর্শ হিসেবে পরিচিত আমাদের সমতার বোধ এবং আমাদের টুকরা টুকরা করে ফেলা বর্ণবাদ, স্বজনপ্রীতি, ভয়, আর হুমকির মতো কঠোর বাস্তবতার মধ্যে চিরন্তন লড়াই।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, 'এই দিনে আমার সবটাজুড়ে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, আমাদের জনগণের ঐক্য গড়তে হবে আর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।' নির্বাচনী প্রচারকাল থেকেই বলে আসা কথার পুনরাবৃত্তি করে বাইডেন বলেন, 'দেশ আজ অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। আর তা মোকাবিলায় মার্কিনিদের ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই।' ভাষণে বাইডেন বলেন, 'এটা গণতন্ত্রের দিন, ইতিহাস এবং আশাবাদের দিন, আর নতুন করে শুরু করার এবং সংকট সমাধান শুরুর দিন।' বাইডেন বলেন, 'জনগণের আকাঙ্ক্ষা শোনা হবে আর জনগণের প্রত্যাশার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, 'আমরা আবারও শিখেছি, গণতন্ত্র অমূল্য। প্রিয় সহযোদ্ধারা, এই মুহূর্তে আমরা গণতন্ত্রের মধ্যে আছি।' এছাড়া অভিষেক ভাষণে উভয় দলের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান বাইডেন। তিনি বলেন, 'আমি আমার পূর্ববর্তী উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের এখানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর আমি আমাদের সংবিধানের সহনশীলতা এবং শক্তি সম্পর্কে, জাতির শক্তি সম্পর্কে জানি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে