স্বপ্ন পূরণে আত্মহারা দেশের ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবার

সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই মুজিববর্ষের লক্ষ্য :প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শনিবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন পরিবারের কাছে সেমিপাকা ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন -ফোকাস বাংলা
এ যেন এক স্বপ্ন! এ যেন পরম পাওয়া। ঠিকানাহীন যে মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, ছিল না কোনো জমি, নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা শঙ্কিত ছিলেন, তাদের মুখে হাসির ফোয়ারা। শুধু জমি নয়, সাথে পেয়েছেন ঘরও। দুই শতক জায়গার ওপর নির্মিত দুটি শোবার ঘর, রান্নাঘর ও বাথরুম। ঘরগুলোর দেয়াল ইটের তৈরি, ওপরে রঙিন টিনের চাল। মানসম্মত আবাসন পেয়ে আত্মহারা দেশের এমন ৬৬ হাজারের বেশি পরিবার। পর্যায়ক্রমে ৯ লাখ গৃহহীন পরিবারকে এমন আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। প্রথম দফায় শনিবার জমিসহ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘরের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সারাদেশে এসব পরিবারের মধ্যে বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, তাদের জীবন যেন উন্নত হয়, বিশ্ব দরবারে আমরা যেন বাঙালি হিসেবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারি। এ দেশটাকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। মুজিববর্ষে অনেক কর্মসূচি করতে পারিনি। গৃহহীন ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিতে পারলাম এর থেকে বড় উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না। গণভবন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় স্বতন্ত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে (শনিবার) সত্যি আমার জন্য একটা আনন্দের দিন। কারণ এদেশে যারা সব থেকে বঞ্চিত মানুষ, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, ঘরবাড়ি ছিল না আজকে তাদেরকে অন্তত একটা ঠিকানা, মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। এজন্যই আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কখনো নিজের জন্য নিজে কী পেলেন, না পেলেন সেটা নিয়ে চিন্তা করেননি। এদেশের মানুষের কথাই চিন্তা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের ঘর করে দেওয়ার চিন্তাটা বঙ্গবন্ধুই প্রথম করেছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে আমাদের পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাকে ছয় বছর কাটাতে হয় বাইরে। শুধু মানুষের কথা ভেবে মানুষের শক্তি নিয়েই দেশে ফিরি। আমার কেউ ছিল না, আমার কোনো থাকার ঘরও নেই। আমি কোথায় গিয়ে উঠব তাও আমি জানি না। আমি কীভাবে চলব তাও জানি না। কিন্তু আমার কেবলই একটা কথা মনে হচ্ছিল যে আমাকে যেতে হবে। যেতে হবে এই কারণে যে সামরিক শাসক দিয়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে আমার দেশের মানুষ, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে। সেই আদর্শ সামনে নিয়েই আমি ফিরে আসি। আমি কখনো আমার ছোট ফুপুর বাড়ি, কখনো মেজ ফুপুর বাড়ি এরকমভাবে দিন কাটাই। কিন্তু আমার একটাই লক্ষ্য একটাই সামনে ছিল যে আমি কী পেলাম, না পেলাম সেটা বড় কথা নয়। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু কী করব। সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখেছি। তিনি আরও বলেন, অনেকে গাল ভরে কথা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকারটা কী? একটা সামরিক শাসকের ক্ষমতা দখল করে একদিন ঘোষণা দিল যে আজকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম, আর তারপরেও সেটা গণতন্ত্র হয়ে গেল? হঁ্যা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল করার সুযোগ করে দিল কিন্তু মানুষকে দুর্নীতি করা, মানিলন্ডারিং করা, ব্যাংকে ঋণ খেলাপি করা, টাকা ব্যাংক থেকে ছাপিয়ে নিয়ে এসে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে মানি ইজ নো প্রবলেম সেই কথা শোনানো। 'আই উইল মেক ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান' একথাও জিয়াউর রহমান বলে গেছে। জিয়াউর রহমানের কাজই ছিল এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা, এদেশের মানুষকে দরিদ্রকে দরিদ্রই রাখা, আর মুষ্টিমেয় লোককে টাকা-পয়সা দিয়ে একটু অর্থশালী সম্পদশালী করে দিয়ে তাদেরকে তার ক্ষমতাকে যেন চিরস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে পারে তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। মেধাবী ছেলে-মেয়েদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দেওয়া, নির্বাচনের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা, তখন হঁ্যা না ভোটে ১১০ ভাগ পড়ে। এরপরে সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সেখানেও কেউ ভোট দিলো না। তারপর দিল সংসদ নির্বাচন, সেটাও আর এক প্রহসন। যারা গণতন্ত্রের জন্য এত কথা বলেন, তাদের কাছে এটাই প্রশ্ন। এটা কী করে গণতন্ত্র? শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকার গঠন করার উদ্দেশ্যই ছিল এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব মানুষ, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে থাকা মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করা। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিলাম। ঘর দিলে ব্যারাক করে দিয়ে প্রত্যেককে একটা ঘরের মালিক করে দেওয়া। একেবারে নিঃস্ব যারা ভূমিহীন যারা তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়ার প্রকল্প করে দিলাম। বস্তিবাসীদের জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচি নিলাম। আমরা গৃহায়ন তহবিল করলাম। বেদে শ্রেণির মানুষের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি, হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা দলিত শ্রেণি বা হরিজন শ্রেণি এই ঢাকা সুইপার কলোনিতে থাকত তাদের জন্য ভালো উচ্চ মানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। চা শ্রমিকদের জন্য ঘর করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি যেন সবাই মানসম্মতভাবে বাঁচতে পারে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না। হয়তো সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই সীমিত আকারে করে দিচ্ছি। যা হোক একটা ঠিকানা আমি সব মানুষের জন্য করে দেবো। আমার বাবা-মা যারা সারাটা জীবন দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।