বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার নতুন ধরন সাধারণের চেয়েও বেশি ভয়ংকর

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি (স্ট্রেইন) সাধারণ করোনার চেয়েও সম্ভবত বেশি ভয়ংকর বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি লন্ডন ও যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে পাওয়া এ ধরনটিতে মৃতু্যহারও বেশি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্যপ্রমাণে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।' সংবাদসূত্র : বিবিসি

নতুন এই ধরনটি এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে স্বাস্থ্যসেবার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বরিস জনসন। তার কথায়, 'কেবল দ্রম্নত ছড়ানোই নয়, এর পাশাপাশি লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যে প্রথম দেখা মেলা এই ধরন থেকে মৃতু্যর হারও বেশি। এ ব্যাপারে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে।'

জানা গেছে, 'নিউ অ্যান্ড অ্যামার্জিং রেসপিরেটরি ভাইরাস থ্রেটস অ্যাডভাইসরি গ্রম্নপের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এমন দাবি করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। নতুন ও পুরনো ধরনগুলোতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃতু্যহার

তুলনা করে গণিতজ্ঞরা যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরনটি বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এই প্রথম করোনার নতুন ধরন নিয়ে এমন দাবি করা হলো। 'বহুরূপী' এই ধরন যে অনেক দ্রম্নত ছড়ায়, সেটা এরই মধ্যে প্রমাণিত। কিন্তু তা যে আরও বেশি বিপজ্জনক, এমন কথা এর আগে শোনা যায়নি। বরং মনে করা হচ্ছিল, তুলনামূলকভাবে এই ধরনটি আক্রান্তদের মৃতু্যর সম্ভাবনা খানিকটা কমই। এমনকি, গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনাও কম, সেই ধারণার উল্টো কথা এবার শোনা গেল বরিস জনসনের মুখে।

যদিও এটি কতটা মারাত্মক, সে বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি টিকা ধরনটির বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে অনেকে মনে করছেন।

'পাবলিক হেলথ' বা গণস্বাস্থ্য ইংল্যান্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন এবং ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্সেটার নতুন এ ধরনটি কতটা প্রাণঘাতী তা খতিয়ে দেখছে। তাদের পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করছেন নিউ অ্যান্ড অ্যামার্জিং রেসপিরেটরি ভাইরাস থ্রেটস অ্যাডভাইজরি গ্রম্নপের (এনইআরভিটিএজি) বিজ্ঞানীরা।

এনইআরভিটিএজি বলছে, ভাইরাসের নতুন ধরনটির বেশি প্রাণঘাতী হওয়ার 'বাস্তব সম্ভাবনা' আছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালেন্স বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক যত তথ্য পাওয়া গেছে তা 'সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়'।

আগে করা কয়েকটি গবেষণায় নতুন ধরনটি অন্য ধরনগুলোর তুলনায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ দ্রম্নতগতিতে ছড়ায় বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। এটি অন্যগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে বলেও সামান্য ইঙ্গিত মিলেছিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এক হাজার ৬০ বছর বয়সি ব্যক্তির মধ্যে পুরনো ধরনে যেখানে ১০ জনের মৃতু্য হতে পারে বলে অনুমান করা হয়, নতুন ধরনে সেটি বেড়ে ১৩-তে দাঁড়াতে পারে।

তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে তুলনায় মৃতু্যর হার বৃদ্ধির কোনো তথ্য মেলেনি। মহামারির মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা দিন দিন উন্নত এবং চিকিৎসকরা আরও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠায় নতুন ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে মৃতু্যর হার আগের ধরনগুলোর তুলনায় বেশি দেখা যায়নি বলেও অনেকে ধারণা করছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের কেন্টে নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। এখন ইংল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে 'তুলনামূলক দ্রম্নতগতিতে' ছড়াতে সক্ষম এই ধরনটিই প্রাধান্য বিস্তার করছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি আরও অর্ধশতাধিক দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে, ফাইজার এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরনটির বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকার দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে পাওয়া ভাইরাসের অন্য দুই ধরন এবং ভ্যাকসিন সেগুলোর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, তার সরকার ভাইরাসের নতুন কোনো ধরনের দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত আরও সুরক্ষিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, 'ঢোকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছি না আমি, তবে আমাদের হয়তো আরও ব্যবস্থা নেওয়া লাগতে পারে।'

নতুন করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর যুক্তরাজ্যে মৃতু্যর হারও বেড়ে গেছে। শুক্রবার সেখানে মারা গেছে এক হাজার ৪০১ জন। তাতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯৬ হাজার। যা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর হার ১৬ শতাংশ বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে দ্বিগুণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে