মাস্কসহ সাত স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যের বিক্রি তলানিতে

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

সাখাওয়াত হোসেন
করোনাভাইরাস মহামারি মানুষের জীবনকে যেমন বিপর্যস্ত করেছে, তেমনি পাল্টে দিয়েছিল সবার আচার-আচরণ। ২০২০ সালের মার্চের আগে মানুষ মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যে জিনিসগুলো নিয়মিত ব্যবহার দূরে থাক, অনেকে যা ভুলেও কখনও ব্যবহার করতেন না সেগুলো সবার নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল। এ কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাত সামগ্রীর চাহিদার সঙ্গে পালস্না দিয়ে দামও হুহু করে বেড়েছে। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসব পণ্য নকল করে তা বাজারে ছেড়ে মোটা অঙ্কের অর্থ কামিয়ে নিয়েছে। অনেক ফার্মেসি মালিক, দোকানি ও ব্যবসায়ী এসব পণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে করোনা সংক্রমণ দ্রম্নত কমতে শুরু করায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট), ডিস-ইনফেক্টেড (জীবাণুনাশক) স্প্রে, লিকুইড সোপ এবং থার্মাল গান (শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র) ও পালস্‌ অক্সিমিটার (রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্র) বিক্রিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে স্বল্পদামি সার্জিক্যাল মাস্ক সামান্য কিছু বিক্রি হলেও এন-নাইনটি ফাইভ কিংবা এন কে-নাইনটি ফাইভসহ দামি মাস্কের ক্রেতার মারাত্মক আকাল পড়েছে। আগের তুলনায় এসব মাস্কের দাম প্রায় অর্ধেক কমলেও চিকিৎসক ও বিত্তশালী মানুষ ছাড়া কেউ তা কিনছেন না। এ ধরনের পণ্য আগে ফার্মেসির পাশাপাশি অনলাইনে ধুমছে বিক্রি হলেও ক্রেতার অভাবে তারা ওইসব ওয়েব সাইট গুটিয়ে নিয়েছেন। এদিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক স্প্রে বিক্রি অনেকটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে। লাজফার্মাসহ বেশ কয়েকটি বড় মাপের ফার্মেসির সেলসম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব পণ্যের বিক্রি বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমেছে। তবে যেসব জেনারেল স্টোরে আগে এসব পণ্য বিক্রি হতো, ওইসব দোকানিদের দাবি- বিক্রি কমতির হার ৮০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে তা আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ২০ শতাংশের ওপরে থাকাকালীন সময় পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যাপক হারে বিক্রি হয়েছে। ফার্মেসি, অনলাইন শপ, সুপার শপ, এমনকি ফুটপাতেও এ পণ্য কেনা নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য শুধুমাত্র ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবাদান কর্মীদের এই পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সাধারণ উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নশ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষও পিপিই কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এ সময় দুই-তিন হাজার টাকা থেকে দেড় দুইশ' টাকাতেও এ পণ্য বিক্রি হয়েছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরে পিপিই বিক্রি একরকম বন্ধই হয়ে গেছে। বাজারে এ পণ্যের বিক্রি এতটাই কমেছে যে তা এখন কিনতে গেলে এখন নানা জায়গায় খুঁজতে হচ্ছে। এদিকে দেশে করোনা শুরুর আগে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষ লিকুইড সোপ ব্যবহার করলেও গত মার্চের পর তা নিম্নবিত্তের ঘরেও পৌঁছে যায়। নেহাত স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে অনেকে ছোট বোতলে লিকুইড সোপ সব সময় হ্যান্ডব্যাগ কিংবা পকেটে ভরে রেখেছেন। এ সময় লাইফবয় ও স্যাভলনের লিকুইড সোপ এ পরিমাণ বিক্রি হয়েছে যে, তারা তা অধিকমাত্রায় উৎপাদন করেও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানিও তরল সাবান বোতলে ভরে বাজারে ছেড়ে রমরমা ব্যবসা করেছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরে লিকুইড সোপ বিক্রির পরিমাণ করোনার আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। অন্যদিকে থার্মাল গান ও পালস অক্সিমিটার বিক্রির হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর বিএমএ ভবনে প্রতিষ্ঠিত একাধিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দোকানি জানান, গত বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা দিনে গড়ে এক থেকে দেড়শ' থার্মাল গান ও পালস অক্সিমিটার বিক্রি করেছেন। অথচ এখন কোনোদিন এ দুটি পণ্য গড়ে ৩০-৩৫টি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো দোকানে এ হার আরও কম। দোকানিরা জানান, অতিরিক্ত লাভের আশায় যারা বড় চালানে থার্মাল গান ও পালস অক্সিমিটার আমদানি করেছেন, তারা এখন বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন। বেগতিক পরিস্থিতিতে অনেকে কেনা দামে তা বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ কিছুটা লস্‌ দিয়েও এসব পণ্য বিক্রি করছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।