শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রেই এক-চতুর্থাংশের বেশি

বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ১০ কোটি ছুঁইছুঁই

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্বে দিন দিন বাড়ছেই। টিকাদান, লকডাউন, সতর্কতা- কোনো কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না এ ভাইরাসের। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারস'র হিসাবে বিশ্বব্যাপী সোমবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটির মাইল ফলকের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, পালস্না দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যাও। সোমবার পর্যন্ত বিশ্বে মারা গেছে ২১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি। তবে আশার কথা, সুস্থ হয়েছেন সাত কোটি ১৮ লাখের বেশি মানুষ। করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৫৭ লাখ পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে চার লাখ ২৯ হাজার ৪৯০ জনের বেশি। তবে সুস্থ হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিশ্বের এক-চতুর্থাংশের বেশি সংক্রমণই এখন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের 'চিফ অব স্টাফ' অভিযোগ করেছেন, সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অবহেলার কারণেই দেশের করোনা পরিস্থিতি

এমন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এমন ভয়ংকর মহামারিকে পাত্তাই দেননি ট্রাম্প।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. ডেব্রাহ বার্কস করোনা সংক্রমণ নিয়ে ট্রাম্পের গোপন কিছু কর্মকান্ড ফাঁস করে দিয়েছেন। রোববার 'সিবিএস নিউজ'র 'ফেস দ্য নেশন' অনুষ্ঠানে মার্গারেট ব্রেনানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্কস বলেন, ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তাই করোনাকে স্রেফ ধাপ্পাবাজি বলে বিশ্বাস করতেন। তারা এ ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন। তারা বলতেন, এসব প্রতারণা।

বার্কস বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, বিস্নচ দিয়ে ফুসফুস পরিষ্কার করলে করোনা চলে যেতে পারে। করোনা নিয়ে ট্রাম্প মার্কিনিদের সঙ্গে উপহাসও করতেন। এসব দেখে ট্রাম্পের সময় অনেকবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বলেও জানান বার্কস।

তিনি বলেন, ট্রাম্পের সময় হোয়াইট হাউসের জাতীয় টাস্কফোর্স নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রেসিডেন্ট যেসব তথ্য ও গ্রাফ দেখিয়েছেন, তা কোনো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের করা ছিল না। হোয়াইট হাউসের ভেতর থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তথ্যপত্র প্রস্তুত করে সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহ করা হতো বলে বার্কস জানান। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহায়ক হয়নি। প্রেসিডেন্টের আচরণ ও দায়িত্বহীন কথাবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখ মানুষের মৃতু্যকে ত্বরান্বিত করেছে। বার্কস 'সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোলের সেন্টার ফর গেস্নাবাল হেলথ'র বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত।

যুক্তরাষ্ট্রের 'সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (সিডিসি) জানিয়েছে, এরই মধ্যে দেশটিতে চার কোটি ১৪ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। দেশের সবাইকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ফেডারেল সরকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার সংক্রামক রোগের প্রধান বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আগের প্রশাসন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ওপর অনেক বেশি দায়ভার রেখে গেছে।

অপরদিকে, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন করোনা মহামারির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। তার প্রশাসন প্রথম ১০০ দিনের কার্যদিবসে ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। গত সপ্তাহে তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু ভ্যাকসিন সরবরাহ সংক্রান্ত আদেশ। নতুন মার্কিন প্রশাসন কয়েক হাজার ক্লিনিক্যাল স্টাফ, সেনাবাহিনীর মেডিকেল সদস্য এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এর ফলে ভ্যাকসিন কার্যক্রম দ্রম্নতগতিতে সম্পন্ন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে মাস্ক পরার নিয়ম আরও কঠোর করে নির্বাহী আদেশ দেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগামী মাসে দেশটিতে করোনায় মৃতু্যর সংখ্যা পাঁচ লাখ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে এক কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। আর মারা গেছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ৫০৩ জন। দেশটিতে এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। সেখানে করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে মারা গেছে দুই লাখ ১৭ হাজারের বেশি। ব্রাজিলেও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তারপরও করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না।

তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ, যুক্তরাজ্য পঞ্চম, ফ্রান্স ষষ্ঠ, তুরস্ক সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম ও জার্মানি রয়েছে দশম অবস্থানে। বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম। এছাড়া ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। যদিও এই মৃতু্য সংখ্য নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃতু্য হয় গত বছরের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। গত ২ ফেব্রম্নয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃতু্যর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। এরপর গত ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে