শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আপত্তির মুখে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সম্প্রতি যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে, সেটা বাতিল করা হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যেই এ ব্যাপারে প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া নতুন করে আবারও সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করছে এনসিটিবি। অপরদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত সিলেবাস বাতিল ও প্রত্যাহার করে আরও
সংক্ষিপ্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে মতিঝিলস্থ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি যোগ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ কারিকুলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, এসএসসি ৬০ দিন এবং এইচএসসি ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবিকে। এর মধ্যে হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২
যতটুকু সিলেবাস পড়ানো হবে, ততটুকুর ওপর প্রশ্ন হবে এবং পরীক্ষা হবে। মধ্য ফেব্রম্নয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিন ক্লাস নেওয়া হবে। ক্লাস চলাকালীন কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এমনকি টেস্ট পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস নেওয়ায় বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বরও কমে আসবে।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী এসএসসিতে ৬০ দিনে ৩৬০টি ক্লাস নেওয়ার মতো সিলেবাস প্রণয়নের নির্দেশনা দেন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের। এনসিটিবি যে সিলেবাস প্রণয়ন করেছে, সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে এবং আগামী কয়েক মাসের ক্লাসে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সেটা শেষ করতে পারবে না। শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী জরুরি বৈঠকে সেটা প্রত্যাহার করে আরও সংক্ষিপ্ত ও ক্লাস উপযোগী সিলেবাস প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রী এনসিটিবির কর্মকর্তাদের বলেন, প্রতিদিন ছয়টি ক্লাস ধরে মোট ৩৬০টি ক্লাস হবে। ১২টি বিষয়ে গড়ে সর্ব্বোচ ৩০টি ক্লাস ধরে সিলেবাস হবে। তবে বিষয়ের গুরুত্ব্ব বুঝে বিষয়ভিত্তিক কম-বেশি ক্লাস হতে পারে। যারা সিলেবাস প্রণয়ন করবেন, তারা এটি ভাগ করে দিবেন কোন বিষয়ে কয়টি ক্লাস হবে।
বৈঠকে এইচএসসি সিলেবাস ও ক্লাস কীভাবে হতে পারে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়। মন্ত্রী সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। এইচএসসির ৮৪ দিন ক্লাস এবং সে অনুসারেই সিলেবাস হচ্ছে। এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি প্রায় শেষ হলেও এসএসসির কারণে সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে। এনসিটিবি যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছিল, সেটি আরও সংক্ষিপ্ত হবে। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যদি ১৫ জুন পর্যন্ত ক্লাস করানো যায়, তাহলে ৮৪ দিন ক্লাস পাবে। মোট ৫০৪টি ক্লাস হবে। গড়ে ৩৮টি ক্লাস পাবে। সে অনুযায়ী, সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি ভাগ করে দিবেন।
বুধবার দুপুরে এনসিটিবিতে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদিকদের বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হলে শিক্ষার্থীরা বলেছে অনেক বেশি। তাই তাদের অনুরোধে আমরা সেটাকে পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্তত্ম নিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যদি মধ্য ফেব্রম্নয়ারিতে স্কুল খুলতে পারি, তাহলে ঈদের আগে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি বাদ দিলে ৬০ দিন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, বিষয়ভিত্তিক যে কয়দিন ক্লাস হবে, সেই সময় কতটুকু পড়ানো যায়, বা কতটুকু একজন শিক্ষার্থী পাঠ নিতে পারবে, নবম-দশম শ্রেণির পুরো সিলেবাসের কতটুকু জানা জরুরি, সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাঠদান সাজানো হবে।
উদাহরণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এক সপ্তাহে একটি সাবজেক্টের তিনটি ক্লাস হলো- তিনটি ক্লাসে যতটুকু পড়ানো হলো কিংবা দেড় সপ্তাহ মিলে দুটি অধ্যায় শেষ হলো। তখন শ্রেণি শিক্ষক একটি ছোট পরীক্ষা নিবেন। এতে শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনো ধরনের ফি নিতে পারবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঈদের পর ১৮ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে জুনে এসএসসি পরীক্ষার নেওয়ার রুটিন দেওয়া হবে। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত স্কুলগুলো মগ টেস্ট, প্রি-টেস্ট বা টেস্ট বা যেকোনো নামের কোনো টেস্ট পরীক্ষা নিতে পারবে না। শুধু ক্লাস হবে আর শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি শিক্ষক এক-দুটি অধ্যায়ের পাঠদান শেষে ক্লাসে পরীক্ষা নিবেন। তিনি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সে জন্য কোনো ফি নেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীকে ফি দিতে বাধ্য করা যাবে না। এ ছাড়া বিষয়গুলোর শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের পাশাপাশি বিকালবেলা অনলাইনেও এই পাঠগুলো শিক্ষার্থীরা দেখতে পারবে। মন্ত্রী আরও বলেন, মে মাসের শেষের দিকে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান টেস্ট পরীক্ষা নিতে চায় তখনকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেব।
এসএসসির সিলেবাস কমানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস আরও কমানো অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের দাবিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে এসএসসি ২০২১'র পরীক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে।
ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ইন্সটিটিউটের পরীক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিমতলা মোড়ে মানববন্ধন করে তারা। পরে তারা সেখানে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে। সড়ক অবরোধের কারণে দুই শতাধিক ছোটবড় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমশের আলী মন্ডল, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।