বিশ্ববিদ্যালয় ভতির্ পরীক্ষা-১

সম্মিলিততো নয়ই, ফরমের দাম বেড়েছে তিন গুণ

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৫

এসএম মামুন হোসেন

শিক্ষাথীের্দর ভোগান্তি এবং বাড়তি খরচের চাপ কমাতে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভতির্ পরীক্ষা নেয়ার দাবি থাকলেও তা পূরণ না করে বরং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গত শিক্ষাবষের্র চেয়ে এবার দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে ভতির্ ফরম বিক্রি করছে। এ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষাথীর্রা অসহায়ের মতো তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কাযর্কর কোনো ভ‚মিকা গ্রহণ করতে পারেনি। শিক্ষাথীর্ ও অভিভাবকরা বলছেন গতবার যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমের দাম ৪০০ টাকা ছিল তা এবার বেড়ে ১ হাজার টাকা থেকে সবোর্চ্চ ১ হাজার ৫শ’ টাকা পযর্ন্ত করা হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একাধিক অনুষদ। এছাড়া সারাদেশে গড়ে একেকজন শিক্ষাথীর্ ১২ থেকে ১৫টি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার কারণে সব মিলিয়ে একজনকে ৩০ থেকে ৫০টি পযর্ন্ত ফরম তুলতে হয়। যাতে একজন শিক্ষাথীের্ক ফরম বাবদই খরচ করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অথর্। এতে করে গরিব শিক্ষাথীর্রা অথর্ সংকটে সব স্থানে পরীক্ষা দিতে পারছে না। যা ধনী-গরিব ভেদে শিক্ষায় বৈষম্যের কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে। ফরমের মূল্য বৃদ্ধির দিক দিয়ে রাজধানীর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি বেড়েছে সবোর্চ্চ তিনগুণ পযর্ন্ত। যদিও ফি বৃদ্ধির কারণ সম্পকের্ এখানকার কতৃর্পক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরমের মূল্য ছিল গড়ে ৪শ’ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২শ’ টাকা। আবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর ফরমের মূল্য ছিল গড়ে সাড়ে চারশ’ টাকা। এবার তা বাড়িয়ে সবোর্চ্চ ১৫শ’ ২৫ টাকা পযর্ন্ত করা হয়েছে। অথার্ৎ এখানে ফি বাড়ানো হয়েছে তিনগুণেরও বেশি। যদিও ইউনিট ভেদে ফরমের এসব মূল্যে কমবেশিও রয়েছে। এবার ফরমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে গোপালগঞ্জের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই। অস্বাভাবিকভাবে ফরমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশের মধ্য ও নিম্নবিত্ত ঘরের শিক্ষাথীর্রা। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রণহীন ফি বৃদ্ধির কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক জায়গার ফরম তাদের পক্ষে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক স্থানে একাধিক ফরম তোলার সুযোগ থাকলেও অতিমাত্রায় মূল্য বৃদ্ধির কারণে এক বা দুটি তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাট থেকে ভতির্ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছেন মো. আসাদ। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘শুনেছিলাম সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নাকি একসঙ্গে নেয়া হবে। তা হলে পরীক্ষার জন্য আর এভাবে সারাদেশে দৌড়ে বেড়াতে হতো না। কিন্তু তাতো হলোই না বরং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের ফরমের দাম বাড়িয়েছে। বিশেষ করে গোপালগঞ্জের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজশাহী এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়তো ফি তিন গুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য এটা যে কত বড় সমস্যা তা যারা নীতিনিধার্রণী পযাের্য় আছেন তাদের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।’ অস্বাভাবিকভাবে ফরমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ প্রফেসর ড. মো. হারুন আর রশিদ আসকারী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের ইউনিট কমিয়ে এনেছি। ইউনিট কমে যাওয়ায় একেকটিতে অনেক সাবজেক্ট থাকছে। এ কারণে ফরমের দাম কিছুটা বেড়েছে।’ তবে উপাচাযের্র বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না শিক্ষাথীর্ ও অভিভাবকরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভতির্ পরীক্ষার ফরম পূরণ করা একজন শিক্ষাথীর্ সবুজের পিতা মোশতাক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘সাবজেক্ট বেশি, এ কারণে ফরমের দাম বেশি এটাকি গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি গ্রহণ করা উচিত ততটাই যতটা ভতির্ পরীক্ষার জন্য খরচ হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভতির্ পরীক্ষাকে একটি বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিণত করেছে। একজন শিক্ষাথীর্র ফরম পূরণ থেকে শুরু করে পরীক্ষা গ্রহণ, বিষয় পছন্দ এবং ভতির্ পযর্ন্ত সব মিলে খরচ হয় বড়জোর তিনশ’ টাকা। কিন্তু ইউনিট কমেছে সাবজেক্ট বেড়েছে, এসব খোড়া অজুহাতে ফি দেড় হাজার টাকা করা কোনোক্রমেই সমথর্ন করা যায় না।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে সেখান থেকেও একই রকম কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচাযর্ প্রফেসর মো. আব্দুস সুবহার যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি সরাসরি দেখাশোনা করি না। ফলে এসব অভিযোগের বিষয়ে এখন সঠিক তথ্য দিতে পাচ্ছি না।’ এছাড়া গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারাও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগকে আমলে নিতে রাজি নন দেশের শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসিও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা দীঘির্দন ধরে চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কয়েকটি গুচ্ছের আওতায় এনে পরীক্ষা নিতে। কিন্তু নানা কারণে এখনো তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আশা করছি, শিগগিরই এ প্রক্রিয়ায় আমরা সফল হব। তখন এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষাথীের্দর জিম্মি করে অথর্ আদায়ের কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় ভতির্ পরীক্ষা নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় আমরাও সেখানে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’ উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ প্রধান আরো বলেন, ‘আমি মনে করি যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সুনিদির্ষ্ট কারণ ছাড়াই অযাচিত ফি বাড়িয়ে থাকে তবে তা সঠিক হবে না। এ জন্য দেশের মানুষের বাস্তব অথৈর্নতিক অবস্থাকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। বিষয় বেড়েছে বলে ফি বাড়ানো ঠিক হবে না। বরং খরচ অনুসারে ফি গ্রহণই যৌক্তিক। কারণ এ ভতির্ পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাড়তি কোনো অথর্ দিই না। এ কারণে তারা এ ফি শিক্ষাথীের্দর কাছ থেকেই নিয়ে থাকেন। তবে তা লাগাম ছাড়া হওয়া ঠিক নয়।’ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগে যোগাযোগ করলে সেখানকার একজন কমর্কতার্ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন কাজ করলে তা যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা যা খুশি তাই করতে পারে। একবারে ভতির্ পরীক্ষার ফরমের মূল্য তিন গুণ বাড়ানো কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত করে পরীক্ষা নিতে। এটা করতে পারলে আশা করি এ ধরনের সমস্যা ভোগ করতে হবে না আমাদের শিক্ষাথীের্দর।’