তারিখ নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে বৈঠক
গুচ্ছ পদ্ধতিতে কয়েক ধাপে ভর্তি পরীক্ষা
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশের ৯ সাধারণ এবং ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। কয়েকটি ধাপে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে ভর্তি তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সবকিছুই নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর। জানা গেছে, ওই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৩ হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রথম ধাপে ভর্তিচ্ছুকদের আবেদন গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে সে আবেদনগুলোকে যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্যতার নিরিখে পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হবে। তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ লিখিত পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। এভাবেই ধাপে ধাপে যাচাই-বাছাই করে যারা মনোনীত বলে বিবেচিত হবেন, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপরোক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে সমন্বয় কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন এ তথ্য জানান।
সভা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষার আয়োজন করা সম্ভব নয়। এজন্য কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে। পরীক্ষায় বসার আগে তাকে ফি পরিশোধ করতে হবে। একজন প্রার্থী আবেদনের ক্ষেত্রে কোথায় ভর্তি হবে এবং পরীক্ষায় বসবে, তা নিজেই পছন্দ করতে পারবেন। এজন্য ২০টি চয়েজ বা পছন্দ করার অপশন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে সবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যত আসনে বসার মতো সুযোগ থাকবে, তত শিক্ষার্থীকে এসএমএস পাঠিয়ে ডাকা হবে। এভাবে কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেওয়া হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে এক নম্বর। ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে আলাদা ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করতে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসার তথ্য জানয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কবে কোথায় পরীক্ষা আয়োজন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহে পরিষদের সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন এবং আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীকে বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হবে।
সভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়া বাকি ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতা
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য নূ্যনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৭ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া), ব্যবসায় শিক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৬.৫ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) এবং মানবিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৬ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবণ্টন হবে যেভাবে
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০ নম্বর, রসায়নে ২০, জীববিজ্ঞান, গণিত এবং আইসিটি মিলে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। জীববিজ্ঞান, আইসিটি ও গণিতের মধ্যে যে কোনো দুটি বিষয়ের উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ১০ নম্বর করে মোট ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।
বাণিজ্য বিভাগের জন্য হিসাববিজ্ঞানে ২৫ নম্বর, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্টে ২৫, আইসিটিতে ২৫, বাংলায় ১৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ১২ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ও আসন সংখ্যা-
এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের যে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে পরীক্ষা হবে, তাদের ভর্তির জন্য শূন্য আসন ঘোষণা করেছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট আসন সংখ্যা দুই হাজার ৩০৫টি। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ৫৫০, মানবিকে ১ হাজার ৪৭১ এবং বাণিজ্য শাখায় ৪৫০টি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৭০৩টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ১ হাজার ২১০, মানবিকে ৩১০ এবং বাণিজ্য শাখায় ৮৩টি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ২১৭টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৬৪৫, মানবিকে ৪৩৫ এবং বাণিজ্য শাখায় ৯১টি।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ৫ আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ১ হাজার ৩৬০টি, মানবিকে ৩৬৫ এবং বাণিজ্য শাখায় ২৮০টি।
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৮১৫টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৭৩৩, মানবিকে ২৮ এবং বাণিজ্য শাখায় ৫৪টি।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ২৮৫টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৯৭০, মানবিকে ১৮৬ এবং বাণিজ্য শাখায় ১২৯টি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট দুই হাজার ৭৬৫টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ১ হাজার ২৪৫, মানবিকে ৮৫০, বাণিজ্য শাখায় ৫২০ এবং চারুকলা (সবার জন্য) ১৫০টি।
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ১৯০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৫১৫, মানবিকে ২৭৩ এবং বাণিজ্য শাখায় ২৫২টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৬০ আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ২৭২, মানবিকে ৫৪০ এবং বাণিজ্য শাখায় ২৪৮টি আসন রয়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৬৮৫ মানবিকে ১০০ এবং বাণিজ্য শাখায় ১৪০টি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৩১৫টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৬৯২, মানবিক শাখায় ৩৯৮ এবং বাণিজ্য শাখায় ২৮১টি।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞানে ৬৫০, মানবিকে ১৪৫ এবং বাণিজ্য শাখায় ১২৫টি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মোট দুই হাজার ৭৪৫টি আসনের মধ্যে এবার এক হাজার ৬০০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। আগের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান শাখায় এক হাজার ৪৬০টি মানবিকে ৩৮৫, বাণিজ্য শাখায় ৩১০ এবং সম্মিলিত (সব বিভাগের জন্য) ৫৯০টি আসন রয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৪৪০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৬৪৯, মানবিক শাখায় ৪৬৩ এবং বাণিজ্য শাখায় ৩০২টি আসন রয়েছে।
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৭৫ এবং বাণিজ্য শাখায় ৭৫টি।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৫৫টি আসনের মধ্যে মানবিকে ১২০ এবং বাণিজ্য শাখায় ৩৫টি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি একশটি আসন রয়েছে। এর মধ্যে সবই বিজ্ঞান শাখার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মানবিক শাখা ও নেই বাণিজ্য শাখায় আসন নেই।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৩০, মানবিক শাখায় ৩০ এবং সবার জন্য ৩০টি।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি আসনের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৯০ মানবিক শাখায় ৩০ এবং বাণিজ্য শাখায় ৩০টি।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যা ৭৩০টি। আসনবিন্যাসের তথ্য জানা যায়নি।