হিন্দুদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ

চট্টগ্রামে ‘ভুল করে’ মন্দির ভেঙে আবার নিমার্ণ

স্থানীয় বাসিন্দারা বিকালে মন্দির ভাঙার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিডি নিউজ
সোমবার উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামসংলগ্ন মহামায়া মগ্ধেশ্বরী মায়ের সেবা খোলা মন্দির ভেঙে ফেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন Ñযাযাদি
উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ কাট্টলী জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম-সংলগ্ন মহামায়া মগ্ধেশ্বরী মায়ের সেবা খোলা মন্দির ভেঙে ফেলার পর স্থানীয় হিন্দুদের ক্ষোভের মুখে সেটা আবার নিমার্ণ করে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন কতৃর্পক্ষ। সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের অভিযানের মধ্যে সেবা খোলা মন্দির ভেঙে ফেলার পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিকালে মন্দির ভাঙার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান। এরপর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন রাতে ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার সকালে সিটি করপোরেশনের তত্ত¡াবধানে সেবা খোলাটি নতুন করে নিমাের্ণর কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের অভিযোগ, ধমীর্য় ওই স্থাপনা ভাঙা হয়েছে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’। তবে সিটি করপোরেশনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের দাবি, বুলডোজারের ‘চালকের ভুলে’ সেবা খোলা মন্দিরের অংশবিশেষ ভাঙা পড়েছে। নগরীর পাহাড়তলি থানার সাগরিকা মোড় থেকে রাস্তার দুই পাশে অবৈধ দোকনপাট উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের ওই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস। অভিযান চলাকালে দুপুর ১-৩০টার দিকে স্টেডিয়ামের সীমানা দেয়াল-সংলগ্ন সেবা খোলার দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় সেবা খোলা মন্দিরের মূল বেদীও ওপড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা হরিকমল দাস বলেন, ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের অনুদানে সংস্কার করা হয়। সরকারি অনুদানে সংস্কারের বিষয়টি মন্দিরের দেয়ালে লেখা ছিল। করপোরেশনের একজন সুপারভাইজার মোবাইল কোটের্ক বিষয়টি অবহিতও করেন। এরপরও কেন ভেঙে দেয়া হলো, জানি না। হরিকমল দাস বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, এত কিছু তো বুঝি না। আপনারা সরকারকে বলেন, যেন মন্দিরটা ঠিকমত থাকে।’ মন্দির ভাঙার বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয় মন্তব্য করে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার বলেন, অভিযানে ফুটপাতের ওপর থাকা সব অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হচ্ছিল। সেখানে ফুটপাতের ওপর দেয়াল ছিল। মন্দির আছে, সেটা জানা ছিল না। উচ্ছেদ চলাকালে আমাদের মেশিনের ধাক্কায় দেয়ালটি ভেঙে যায়। কোনো লোকজন সেখানে দেখিনি। সিটি করপোরেশনের ওয়াডর্ কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, চালক ভুলবশত মন্দিরের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে। মেয়র ঘটনাস্থলে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আগের চেয়েও আকষর্ণীয় করে মন্দিরটি গড়ে দিতে বলেছেন। সকালেই নিমার্ণকাজ শুরু হয়েছে। দুগার্পূজার আগেই শেষ করতে পারব, আশা করি। দেয়াল ভাঙার ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘এর জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। এরপর অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি চন্দন তালুকদার অভিযোগ করেন, চালকের ভুল নয়, এটা ‘ইনটেনশনাল’। উচ্ছেদ অভিযান চলছিল সেবা খোলা থেকে অনেক দূরে। ওখানে কেন গেল? স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে এতে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে আমরা মেয়রকে বলেছি। ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়াডের্র কাউন্সিলর মোরশেদ আখতার চৌধুরী বলেন, তারা ছোটবেলা থেকেই ওই মন্দির দেখে আসছেন। ‘চালক ভেঙে ফেলেছে, ম্যাজিস্ট্রেট বলছেন, ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও স্পশর্কাতর বিষয়। অভিযানের সময় আমি সেখানে ছিলাম না। খবর পেয়েই ছুটে গেছি।’ এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে মোরশেদ আখতার চৌধুরী বলেন, মেয়রের নিদেের্শ মেরামত শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশনই অথার্য়ন করবে। স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৫ সালে ওই এলাকায় মহামায়া মগ্ধেশ্বরী মায়ের সেবা খোলা স্থাপন করা হয়। পরে জহুর আহমদ স্টেডিয়াম ও কয়েকটি স্থাপনা নিমার্ণ করতে গিয়ে মন্দিরটি কিছুটা সরিয়ে নিতে হয়। সবশেষে স্টেডিয়াম-সংলগ্ন স্থানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ মন্দিরের সীমানা প্রাচীর নিমার্ণ করে দেয়। সনাতন ধমার্বলম্বীরা বিভিন্ন ধমীর্য় ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে ‘সেবা খোলায়’ গিয়ে দেবতার উদ্দেশে তেল-সিঁদুর দিয়ে এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজা দেন। দক্ষিণ কাট্টলীর ওই এলাকায় জেলে সম্প্রদায়ের বসবাস। মূলত নিম্নআয়ের জেলে পরিবারের সদস্যরাই ওই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে থাকেন।