বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সেমিফাইনাল আজ

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে অনুশীলনে সৌম্য সরকারকে টোটকা বাতলে দিচ্ছেন বোলিং কোচ কোটির্ন ওয়ালশ Ñবিসিবি
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের জাদুকরী শেষ ওভারের রোমাঞ্চের রেশটা রয়ে গেছে এখনো। তবে সেই রোমাঞ্চের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার আর উপায় নেই বাংলাদেশ দলের। সোমবার বিশ্রামে কাটানোর পর তাই মঙ্গলবার সাগ্রহে অনুশীলনে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটা যখন এশিয়া কাপের অলিখিত ‘সেমিফাইনাল’ তখন বিশ্রামে সময় কাটানোর বিলাসিতা কি করে দেখায় মাশরাফি ব্রিগেড! বাংলাদেশের কাছে আগের ম্যাচে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান। তাদের ওই হার ফাইনাল নিশ্চিত করে দিয়েছে ভারতের, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যকার সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটিকে বানিয়ে দিয়েছে সেমিফাইনাল। আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হতে যাওয়া ওই সেমিফাইনালে যারা জিতবে, শুক্রবারের (২৮ সেপ্টেম্বর) ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে তারা। একেবারে সহজ-সরল সমীকরণ। সেই সমীকরণ মেলাতে নিজেদের সবটুকু নিংড়ে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। মহাদেশীয় ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের আসরে তৃতীয়বার ফাইনালে খেলার হাতছানি টাইগারদের সামনে। সুযোগটা কি আর হেলায় হারানো যায়? কঠোর অনুশীলনে তাই নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা। সকালে প্রধান কোচ রোডস ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন শিষ্যদের নিয়ে। তরুণদের দিয়েছেন দিকনিদের্শনা। মুশফিক-শান্তরা যখন নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে, ফঁাকে ফঁাকে রোডস শুধরে দিয়েছেন ভুলত্রæটি। ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন পেস বোলিং কোচ কোটির্ন ওয়ালশও। অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সৌম্য সরকারকে নিয়ে। প্রশ্ন জাগতে পারে, টপঅডার্র ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ওয়ালশের কি কাজ। আসলে, সৌম্য কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো পেস বোলিংটাও করতে জানেন। সৌম্যর বোলিং অনুশীলন কি তবে একাদশ সম্পকের্ একটা বাতার্ দিয়ে রাখল? পরিস্থিতি কিন্তু তেমন ইঙ্গিতই করছে। দারুণ এক হাফসেঞ্চুরিতে এশিয়া কাপ শুরু করা মোহাম্মদ মিঠুন পরবতীর্ ম্যাচগুলোতে যারপরনাই ব্যথর্। আজকের ম্যাচের একাদশে তার থাকাটা আশ্চযের্রই হবে! একাদশে এই ব্যাটসম্যানের বিকল্প হওয়ার দৌড়ে সৌম্যই এখন এগিয়ে। তাহলে বোলিং অনুশীলনে বাড়তি নজর কেন? কারণ, আঙুলে চোট সাকিব আল হাসানের, বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের এই ম্যাচে খেলা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ জন্যই ‘বোলার’ সৌম্যকে প্রস্তুত রাখা! আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে খেলা একাদশে যদি পরিবতর্ন আনা হয়, তা ওই মিঠুন আর সাকিবেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু এমন মহাগুরুত্বপূণর্ ম্যাচে দেশের ক্রিকেটের সব থেকে বড় তারকাটিকে ছাড়া কি মাঠে নামা ঠিক হবে? আসলে এ ক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্ট নিরুপায়, চোটের সঙ্গে আর কতক্ষণই বা যুদ্ধ করা যায়! টিম ম্যানেজমেন্ট তাই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তটা ছেড়ে দিয়েছে সাকিবের ওপর। আঙুলে ব্যথা নিয়েও তিনি যদি খেলতে চান, খেলবেন। নয়ত বিশ্রাম। সাকিব যদি বিশ্রামে থাকেন, দুঃসময়ে পাকিস্তানকে সেটা কিছুটা হলেও প্রশান্তি দেবে। ভারতীয় মিডিয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করেছিল এবারের এশিয়া কাপে তিনবার মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারত আর পাকিস্তান। সেই সম্ভাবনা এখনো আছে। এর আগে আগামীকাল বাংলাদেশকে হারাতে হবে পাকিস্তানকে। তবেই ১৪তম আসরে মঞ্চায়িত হবে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অঘোষিত সেমিফাইনাল পেরোতে পারবে তো পাকিস্তান? পাকিস্তানের কোচ মিকি আথার্র কিন্তু বলছেন, তার শিষ্যরা এখন আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভুগছে। তার ভাষ্য, ‘ব্যথর্তার ভয় কিছুটা হলেও ড্রেসিংরুম গ্রাস করেছে।’ তবে এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দঁাড়াবে দল, আথার্র ব্যক্ত করেছেন এমন আশাবাদও, ‘আমাদের তো এখানেই থেমে যাওয়ার উপায় নেই। এগিয়ে যেতে হবে। আশা করি, দ্রæতই আমরা ঘুরে দঁাড়াব। আরও ভালো এবং শক্তিশালী দল হিসেবে ফিরে আসব।’ সা¤প্রতিক ইতিহাস কিন্তু কথা বলছে বাংলাদেশের পক্ষেই। ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই দলের সবশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৫ সালে, বাংলাদেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে। যেখানে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করেছিল মাশরাফির দল। এমনকি টি২০ ক্রিকেটেও দুই সবশেষ তিন দেখায় দুই ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া টানা দুই হারে পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার পর যেভাবে ফিরে এসেছে টাইগাররা, সেটা তাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। শেষের নাটকীয়তায় পাওয়া ওই জয় মাশরাফিদের মধ্যে ‘আমরা পারব’Ñ এই বিশ্বাসটাও বুনে দিয়েছে। আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম পাকিস্তানের তিন হোম গ্রাউন্ডের একটি। আরব আমিরাতের এই কন্ডিশনেও তারা অভ্যস্ত আর বাংলাদেশ দল এই প্রথম খেলছে মরুভ‚মির তপ্ত গরমের মধ্যে। অঘোষিত সেমিফাইনালটি তাই কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের কোচ রোডস কিন্তু নিভার্র, ‘পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা অসম্ভব কিছু নয়। এটা এখন অঘোষিত সেমিফাইনাল। পাকিস্তানের প্রতি আমার পূণর্ শ্রদ্ধা আছে। তবে নিজেদের সামথর্্যটাও ছেলেরা দেখিয়েছে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি, আমরাই জিতব এবং ভারতের সঙ্গে ফাইনাল খেলব। কারণ, ক্রিকেটাররাও শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ ছন্দে আছে।’ কোচের কণ্ঠে এমন আত্মবিশ্বাস মহাগুরুত্বপূণর্ ম্যাচের আগে নিশ্চিত করেই মাশরাফির দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণায় মাঠের পারফরম্যান্স হোক উজ্জ্বল, মরুর বুকে উড়–ক টাইগারদের বিজয়কেতন, সেই প্রত্যাশায় এখন গোটা বাংলাদেশ।