জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন আদালতের মন্তব্য

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুনীির্ত মামলার শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আপনারা কি আদালতে আসেন কেবল জামিন নেওয়ার জন্য? আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন।’ খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতকর্ শুনানি না করে তার আইনজীবীরা সময় চাইলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান এসব কথা বলেন। সোমবার এই মামলার দুই আসামি আদালতে অনাস্থা দেন। এর ওপর মঙ্গলবার আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করেছিলেন আদালত। মঙ্গলবার আদালত বলেন, অনাস্থার বিষয়ে বুধবার আদেশ দেবেন। মঙ্গলবার শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকাজে আদালতকে সহযোগিতা করছেন না। বরং ভেতরের-বাইরের ষড়যন্ত্র এক হয়ে গেছে। কেমন যেন গুমোট অবস্থা তৈরি হয়েছে। আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়ার প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি যে আসামিপক্ষ অনাস্থা দেবে। বাস্তবে তারা ষড়যন্ত্র করছেন। আদালত মামলার কাযর্ক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন। তাদের আচরণ স্ববিরোধী। উচ্চ আদালত থেকে কোনো আদেশ আসেনি। আদালত মামলার কাযর্ক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন। আইনে যুক্তিতকের্র বিধান নেই জানিয়ে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, ‘দুদকের পক্ষে যুক্তিতকর্ শুনানি শেষ হয়েছে। আসামিপক্ষের আংশিক যুক্তিতকর্ হয়ে গেছে। এখন তারা যদি যুক্তিতকর্ শুনানি না করেন, তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আসামিদের যুক্তিতকর্ এর সুযোগ দিয়ে মনে হচ্ছে, আমরা ভুল করেছি। এখন যুক্তিতকর্ না করলে মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন আদালত।’ খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া মামলা চালাতে দেবেন না। এভাবে চললে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। কারাগারে থাকলে কোনো আসামি বলতে পারেন না, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। খালেদা জিয়াকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব না। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বয়স্ক মহিলা। তার সুবিধার কথা ভেবে এখানে আদালত বসানো হয়েছে। তার সম্মানের কথা ভেবে জেল কতৃর্পক্ষ তাকে আনছে না। এ সুযোগ তারা নিচ্ছে। অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। খালেদা জিয়া একা চলতে পারেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। বাথরুমে পড়ে গেছেন। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোডর্ হয়েছে। কারা মহাপরিদশর্ক জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন জানিয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তিনি আদালতে আসবেন। সে পযর্ন্ত শুনানি মুলতবি চান তিনি। আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়া দুই আসামি হলেন বিআইডবিøউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয় জিয়াউল ইসলামকে। আজ তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে আদালতে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম হাজির ছিলেন না। মনিরুলের আইনজীবী আখতারুজ্জামান আদালতে হাজির ছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বর এই মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে আদেশ দেন আদালত। আজও খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি। নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসেন। কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আদালতকে বলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। তিনি আর আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছা আদালত তাকে সাজা দিতে পারেন। এরপর এই মামলায় চার দিন শুনানি হলেও খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। কারা কতৃর্পক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান না। অবশ্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আদালতকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান। কারা কতৃর্পক্ষ যেভাবে বলেছে, তা ঠিক নয়। আগে এই মামলার বিচার চলছিল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলায় দুদক যুক্তিতকর্ উপস্থাপন শেষ করেছে। খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতকর্ শুনানি বাকি রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগঁাও থানায় মামলা করে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর আসামিরা হলেন হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান।