শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
স্বৈরশাসনে মিয়ানমার

ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জান্তাকে হুঁশিয়ারি জাতিসংঘের

এবার দেশটিতে রেললাইন বন্ধ করে বিক্ষোভ হ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে সিঙ্গাপুর
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মিয়ানমারের সামরিক অভু্যত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত প্রতিবাদকারীদের প্রতি কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে তার 'ভয়াবহ পরিণতি' সম্পর্কে দেশটির জান্তাকে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে ফোন করে জাতিসংঘের বিশেষ দূত শানার বার্জেনার এ হুঁশিয়ারি দেন বলে সংস্থাটির এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, 'শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে যেন অবশ্যই পুরোপুরি সম্মান করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিহিংসার শিকার যেন না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে চাপ দেন শানার বার্জেনার।'

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে তিনি (দূত) বলেন, 'বিশ্ব নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কঠোর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।' বার্জেনার সেনাবাহিনীকে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা নিয়েও সতর্ক করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।

গত রোববার রাতে মিয়ানমারের প্রধান শহরগুলোতে সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করা হয়। তা সত্ত্বেও অভু্যত্থানের নিন্দা জানিয়ে ও কারাবন্দি নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদকারীরা ফের বিক্ষোভ দেখান। সোমবারই জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার বার্জেনার সামরিক জান্তার উপপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।

এদিকে, এই আলাপ সম্পর্কে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, সামরিক কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি সোয়ে উইন জাতিসংঘের দূতের সঙ্গে প্রশাসনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাকে 'মিয়ানমারের যা ঘটছে সেই সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে' তথ্য দিয়েছেন।

উলেস্নখ্য, গত ১ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ

শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা ও মুক্তির আহ্বান সত্ত্বেও সু চিসহ আটক নেতাদের বন্দি করে রেখেছে জান্তা।

সামরিক শাসনের অবসান ও সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেখেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান শহরগুলোতে সেনা ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে সামরিক কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, মঙ্গলবার ভোরে দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জান্তা সরকার। তবে স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে আবারও তা চালু হয়। এর আগে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা 'নেটবস্নকস'ও।

সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর থেকে মিয়ানমারজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি সামরিক অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর মানুষের ক্ষোভ দমাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় জান্তা সরকার। রাস্তায় টানা বিক্ষোভের পাশাপাশি অনলাইনেও অভু্যত্থানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট সংযোগ বারবার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্যাংক ও সেনা মোতায়েনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জান্তা দেশটিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। এমনকি মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।

এবার রেললাইন বন্ধ করে বিক্ষোভ

এদিকে, মিয়ানমারে সামরিক অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ইয়াঙ্গুন ও দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরের রেল লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। জাতিসংঘ দূতের ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পর মঙ্গলবার রেললাইন অবরোধ করা হয়। রাস্তায় সাঁজোয়া যান ও সেনাদের উপস্থিতি থাকলেও বিক্ষোভ চালিয়ে যায় প্রতিবাদকারীরা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন শহর ও নগরে বিক্ষোভ, অসহযোগিতা ও ধর্মঘটে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম থমকে গেছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পস্ন্যাকার্ড হাতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ইয়াঙ্গুন ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাউলামিনের রেললাইনে অবস্থান নেয়। এতে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় বিক্ষোভকারী স্স্নোগান দেয়, 'অবিলম্বে আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও, জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও'। ইয়াঙ্গুনের আরও দুটি স্থানেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। এর একটি হলো চিরাচরিত বিক্ষোভের স্থান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে, আরেকটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। দ্বিতীয় স্থানে বিক্ষোভকারী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে ব্যাংক কর্মীদের আহ্বান জানায়।

এছাড়া প্রায় ৩০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু অভু্যত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রার্থনার মাধ্যমে। গত কয়েক দিনের তুলনায় সোম ও মঙ্গলবার বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল কম। তবে দেশব্যাপী ছোট ছোট বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে সিঙ্গাপুর

অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে 'নির্বিচারে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা' আরোপ করা হলে দেশটির সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এ কারণে তারা এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান তাদের সরকারের এ অবস্থান তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম।

পার্লামেন্টকে বালাকৃষ্ণান জানান, মিয়ানমারের সামরিক অভু্যত্থানের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির ওপর 'ব্যাপকভিত্তিক নির্বিচার নিষেধাজ্ঞা' আরোপ করার পক্ষে নন তিনি, কারণ এতে দেশটির সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

'ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপের' পক্ষে সমর্থন না জানালেও মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে 'উদ্বেগজনক' বলে অভিহিত করেছেন বালাকৃষ্ণান। দেশটির ক্ষমতাচু্যত নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে মুক্তি দিয়ে আলোচনার পথ সুগম করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

'অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইষ্ট এশিয়ান ন্যাশনস' (আসিয়ান)-এর সদস্য সিঙ্গাপুর জোটের অপর সদস্য দেশ মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আসিয়ানের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে জোটটির অপর সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে