বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মতপ্রকাশের জন্য অভিজিৎকে জীবন দিতে হয়েছে :আদালত 'তারা সহানুভূতি পেতে পারে না'

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করাই ছিল বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য, সে কারণে এ মামলার আসামিরা কোনো 'সহানুভূতি পেতে পারে না' বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে উলেস্নখ করা হয়েছে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালের বিচারক মজিবুর রহমান মঙ্গলবার দপুরে অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ছয় আসামির মধ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যকে মৃতু্যদন্ড এবং উগ্রপন্থি এক বস্নগারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন তিনি।

৫০ পৃষ্ঠার এ রায়ে বলা হয়, 'সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে অভিজিৎ রায় একজন বিজ্ঞান লেখক ও বস্নগার ছিলেন। বাংলা একাডেমির বই মেলায় বিজ্ঞান

মনস্ক লেখকদের আড্ডায় অংশগ্রহণ করে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন। নাস্তিকতার অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা, অর্থাৎ এ মামলার অভিযুক্তরাসহ মূল হামলাকারীরা সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মতপ্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়।'

বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, 'অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ ও নিরুৎসাহিত করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মতপ্রকাশ না করতে পারে।'

আসামিদের সাজার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেন, 'বাংলাদেশে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে মতপ্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত আসামিদের কারও ভূমিকা ছোট-বড় করে দেখার সুযোগ নেই। 'যেহেতু অভিযুক্ত পাঁচজন আসামি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও মো. আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে অভিজিত রায় হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন, সে জন্য ওই ৫ জন আসামির একই সাজা প্রদান করা হবে বাঞ্ছনীয়।'

'অভিজিৎ রায় হত্যায় অংশগ্রহণকারী অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আর ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তমনা লেখকরা স্বাধীনভাবে লিখতে এবং মতপ্রকাশ করতে সাহস পাবেন না। কাজেই ওই আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না।'

২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সত্তা বা বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের অখন্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনো সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, তাহলে তিনি মৃতু্যদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ড আরোপ করা যাবে। একই আইনের ৬(১)(ক)(আ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর জখম, আটক বা অপহরণ করার জন্য ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ৪ থেকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড দেওয়া যাবে।

পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা বস্নগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও তিনি ২০১৫ সালে একুশে বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন। ২৬ ফেব্রম্নয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।

২০১৯ সালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আগের নাম আনসারুলস্নাহ বাংলা টিম) নেতা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচু্যত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়ার 'নির্দেশেই' সেদিন অভিজিতের ওপর হামলা হয়। জিয়াসহ দুজনকে পলাতক দেখিয়ে মোট ছয় আসামির বিরুদ্ধে এ মামলার বিচারকাজ চলে। মঙ্গলবার তাদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালের বিচারক মজিবুর রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে