শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাত কলেজে পরীক্ষা হবে ছাত্রাবাস খোলা হবে না

বিক্ষোভ-অবরোধ করে দাবি আদায় শিক্ষার্থীদের

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
পরীক্ষা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন -যাযাদি

শিক্ষার্থীদের দুই দিনের আন্দোলন-বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার আগে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। পূর্বঘোষিত রুটিনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ছাত্রাবাস খোলা হবে না। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে।

এদিকে, পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ের অবরোধ বুধবার বিকালে তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ফোকাল পার্সন) ও ঢাকা কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উলস্নাহ খোন্দকার বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে শুধু সাত কলেজের ব্যাপারেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। সে ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।

বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'সাত কলেজের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাত কলেজের পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবারের (২৪ ফেব্রম্নয়ারি) চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ৭ মার্চ এবং আজ বৃহস্পতিবারের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।' এছাড়া নির্ধারিত রুটিনের অন্য সব পরীক্ষা চলবে।

বুধবার দুপুরের পরপরই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাত কলেজের অধ্যক্ষরা জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শর্তের মধ্যে রয়েছে-পরীক্ষা চলাকালে হল খোলা যাবে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

এর আগে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হল খোলার দাবিতে আন্দোলন ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার দুপুরে ভার্চুয়ালি জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘোষণা দেন, আসন্ন রোজার ঈদের পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খুলবে। খোলার আগে কোনো পরীক্ষা হবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ও হল খোলার ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তও বাতিল হবে। অবশ্য অনলাইনে ক্লাস চলবে।

এর পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পরীক্ষা একে একে স্থগিত করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রীর এ ঘোষণার পর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের চলমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রম্নয়ারি) সন্ধ্যায় এক বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।

এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক নীলক্ষেত মোড়ে প্রথমে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিয়ে চলে যান। সকালে শিক্ষার্থীরা আবারও রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজের চলমান পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষা কার্যক্রম ও ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার দাবিতে বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে যানজটের কবলে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক।

অবরোধ চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ফোকাল পার্সন) আই কে সেলিম উলস্নাহ ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে নীলক্ষেত এলাকায় যান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা অবরোধ থেকে সরে আসেনি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত আকারে বিজ্ঞপ্তি ও এর সুষ্ঠু সমাধান দাবি করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সাজিয়া সুলতানা বলেন, 'আমাদের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের মাত্র একটা পরীক্ষা বাকি। এ পর্যায়ে পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় আমরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছি- এটা কি মেনে নেয়া যায়?'

ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন বলেন, 'স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের পরে শুরু হলো। আমরা আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম শঙ্কিত।'

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোয় মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে