ঢাকায় আরও একটি হাইটেক পার্ক

বস্নক-চেইনসহ রোবোটিকস প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ঢাকায় আরও একটি হাইটেক পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এই পার্কে নতুন উদ্যোক্তাসহ কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২ হাজার কর্মী। দেশে বিদ্যমান বাকি ৮টি হাইটেক পার্কের প্রায় সব সুবিধার পাশাপাশি নতুন এই পার্কটি হবে একটু ভিন্ন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চতুর্থ শিল্প বিপস্নব প্রেক্ষাপটে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিকস, বস্নকচেইন ও রোবোটিকসের মতো প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচলনা করা হবে এই পার্কটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে জানান, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ারের পাশে 'প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট' (প্রাইম) নামে এই পার্কে সিংহভাগ অর্থের উৎস বিশ্বব্যাংক। ৩৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ২৫৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক আর ৯৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। যা একনেকের সর্বশেষ সভায় অনুমোদন হয়েছে। 'ভিশন ২০৪১' নামের এই ভবনের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। বর্তমান সরকারের সময় আলোচিত এই খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের কথা থাকলেও, গত ৫ বছরে জনতা পার্ক ছাড়া বাকিরা অনেকটাই পিছিয়ে। উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবসায় রাজধানী কেন্দ্রিকতা ও নাগরিক সুবিধা বেশি থাকায় বাইরের পার্কগুলোতে দক্ষ কর্মী কাজে খুব একটা আগ্রহ নেই। ফলে আইসিটি খাতে দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার ধারেকাছে যেতে পারেনি পার্কগুলো। আইসিটি খাতে জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে এসব পার্ক স্থাপন করা হলেও মূলত দক্ষ জনশক্তির অভাব এ খাতের প্রধান বাধা বলে মনে করেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের এই দীর্ঘ পরিকল্পনার বিষয়ে সংস্থাটির যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) প্রকৌশলী এএনএম শফিকুল ইসলাম জানান, চতুর্থ শিল্প বিপস্নবে প্রযুক্তির পরিবর্তন পরিমার্জন খুবই দ্রম্নত হয়। নতুন কিছু আবিষ্কার হলেই শেষ নয়, বরং ক্রমাগত ডেভেলপমেন্ট করে তা আরও উন্নত না করলে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, নিত্যপ্রতিক্রিয়াশীল প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতেই বেশকিছু দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনার আওতায় প্রাইম হাইটেক পার্কসহ ধাপে ধাপে সারাদেশে আরও ৩৯টি এমন পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রি রেভু্যলেশন' সেন্টার স্থাপন করা হবে, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিকস, বস্নকচেইন, রোবটিকস- এসব বিষয়ে গবেষণা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকালীন সময়েই তাদের বিভিন্ন ইনোভেশন ও আইডিয়া দেশের সব ধরনের শিল্পের প্রযুক্তিগত উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) আতিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, আইসিটি খাতে ডেভলপমেন্টে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই ফলে প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আর নেই। ঢাকার জনতা টাওয়ারে। ১৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার কর্মী এখানে কাজ করছেন। ঢাকার বাইরে রাজশাহী, সিলেট ও গাজীপুরে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রশিক্ষণ করানোর মধ্যে উৎপাদন অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিদেশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে এসব পার্কগুলোতে। সম্প্রতি চীনা বায়োটেক প্রযুক্তির কোম্পানি অরিক্স গাজীপুরে দেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই কোম্পানিটি মানুষের শরীর থেকে পস্নাজমা নিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করবে। গত রোববার বাংলাদেশ হাইটেক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কাছে কালিয়াকৈর পার্কে রেডি পস্নট হস্তান্তর করেছে। আর রাজশাহীতে অনেক বিদেশি পাওয়ার কোম্পানির বড় বিনিয়োগ এবং অনেকেই উৎপাদনে রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জটিল প্রযুক্তিগত ডেভেলপমেন্টে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিকস, বস্নকচেইন ও রোবোটিকসের মতো প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্দিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠনিক গবেষণার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের সার্বিক পরিকল্পনা সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রযুক্তির বিকাশেও তাদের গবেষণা কাজে লাগানো হবে। যা তরুণদের মেধার যথাযথ ব্যবহার ও দেশের অর্থনৈতির উন্নতিতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চায়, তারা যেন একটি ৬ মাসের কোর্স করে বা ১২ মাসের একটি ডিপেস্নামা কোর্স করে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, ফ্রিল্যান্সার বা আউটসোর্সিং করতে পারে, ঢাকামুখী বা বিদেশমুখী না হয়, সেই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে এসব ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১০ লাখের বেশি তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও এই বছরেই বুয়েট ও চুয়েটে বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টার স্থাপন করা হবে যেখানে ছাত্রছাত্রীদের ভেতরে উদ্যোক্তা হওয়ার যে ইচ্ছা ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সহযোগিতা প্রদান করবে। বিগ ডেটা প্রসেসিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়োটেকনোলজি কিংবা বস্নকচেইন প্রযুক্তিতে বিক্ষিপ্ত কিছু অর্জন থাকলেও মোটা দাগে অর্জন খুবই কম। তবে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট ও দেশের বাজার ধরতে অনেক প্রতিষ্ঠানই বেশ সফল বলে জানায় ইস্টার্ন আইটি ও সফটওয়্যার লি.-এর প্রধান নির্বাহী শেখ সালেহ তান্নাহ। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রাইমারি লেভেলের সফটওয়্যার ইমপিস্নমেন্ট বা ডেভেলপমেন্টে আমদানির এক ধরনের বিলাসী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আশা উচিত।