টিকাসর্বস্ব করোনা মোকাবিলা নির্দেশনায় আটক স্বাস্থ্যবিধি

এ পর্যন্ত টিকা গ্রহণ করেছেন প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ হ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিবন্ধন ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৫

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

জাহিদ হাসান
দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিবেশী ভারতের ২০ লাখ ডোজ উপহারের টিকার বাইরে বাংলাদেশ সরকারিভাবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে। যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ এবং দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ও উপহারের টিকাসহ এ পর্যন্ত ৯০ লাখ ডোজ এসেছে। গতকাল পর্যন্ত দেশের ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে একজন ব্যক্তি দুই ডোজ করে টিকা পাবেন। এদিকে ভাইরাসটি মোকাবিলায় টিকা গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবে দিন যত যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি পালন ততই উপেক্ষিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ কোটি জনগোষ্ঠীর সবাই করোনা সংক্রমিত হতে পারে। তবে দেশে মাত্র ৩ কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকার ব্যবস্থা হয়েছে। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত ও টিকার আওতায় আনতে কয়েক বছর সময় পার হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে টিকা সর্বস্ব করোনাভাইরাস মোকাবিলা ছাড়া জনসাধরণের স্বাস্থ্যবিধি পালন কেবল নির্দেশনায় আটকে আছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মহামারি প্রতিরোধ করা চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম। তবে সংক্রমণ কমে গেছে এমনটা নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের হার কমার পরে পুনরায় তা বেড়েছে। উদাসীনতা করলে চলবে না। কিন্তু সারাদেশে টিকা নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরা, ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যস্ততা, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো গুরুত্ব হারিয়েছে। অথচ দেশে এখন ক্লাস্টারভিত্তিক সংক্রমণ চলছে কি না তা এ সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পর সব সমস্যা শেষ হয়ে গেছে মনে করবেন না। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে আপনাদের সর্বদা মাস্ক পরতে হবে এবং সব স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। যদিও আমরা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি, তারপরও মাস্ক ব্যবহার করা, হাত পরিষ্কার রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।' তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে বলছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা ছাড়াও বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে করোনা টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে গড়া জোট কোভ্যাকস থেকে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষকে টিকা সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০ শতাংশ হিসাবে কোভ্যাকস থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। কোভ্যাকসের বিতরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রথম ধাপের ১ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসবে। বাংলাদেশ এ বছরের প্রথমার্ধে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ টিকা পাবে। তবে এই সহায়তা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে কোভ্যাকসের সঙ্গে আলোচনা চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র যায়যায়দিনকে জানিয়েছে গত ২৭ জানুয়ারি কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৫ জন পুরুষ ও ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭৫ নারী টিকা নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগে ৬৩ হাজার ২৪৪ জন, ময়মনসিংহে ৭ হাজার ২৩৩ জন, চট্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৮৬৭ জন, রাজশাহীতে ১৮ হাজার ২১৬ জন, রংপুরে ১৬ হাজার ৭০১ জন, খুলনায় ২৬ হাজার ১৮৬ জন, বরিশালে ৮ হাজার ৫১ জন এবং সিলেটে ৭ হাজার ৯৪১ জনসহ টিকা প্রয়োগের ষোড়শ দিনে আট বিভাগে ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৯ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৫ জন। দেশে ড্রাই রানসহ এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৬৯৬ জনের শরীরে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের চিত্র : অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২২৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৮২ জন, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯১০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৪৭২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ২৬৪ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৯৫০ জন, ?কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১ হাজার ৩৭০ জন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ৯২৬ জন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে (মাতুয়াইল) ৮৪৩ জন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১ হাজার ৬৮০ জন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে (মিরপুর) ৬২০ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬৭৯ জন এবং ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ৭৯০ জন টিকা নিয়েছেন। সবমিলে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরে ৪৭টা কেন্দ্রে মোট ৩০ হাজার ৩৫১ জন টিকা নিয়েছেন। আগের দিন মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৮৫৭ জন। গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরুর দিন থেকেই সংসদে এই টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে।