শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে :প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
ভার্চুয়াল বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পর সব সমস্যা শেষ হয়ে গেছে মনে করবেন না। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে আপনাদের সব সময় মাস্ক পরতে হবে এবং সব স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। যদিও আমরা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি, তারপরও মাস্ক ব্যবহার করা, হাত পরিষ্কার রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।

চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ প্রাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

সরকার দেশের মানুষের জন্য সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস কালে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণায় তার সরকারের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা ২

হয়েছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতির চাকা যেখানে স্থবির হয়ে গেছে সেখানেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আমরা সচল রাখতে সমর্থ হয়েছি এবং অনেক উন্নত দেশের পূর্বেই দেশের জনগণের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা করতে সমর্থ হয়েছি।

অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ড. সাজ্জাদ হুসেইন। নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

চিফ ক্যাডেট ক্যাপ্টেন আবির মোহাম্মদ সালমান নূর সার্বিক বিবেচনায় সফল চৌকস ক্যাডেট হিসেবে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পাসিং আউট ক্যাডেটদের মাঝে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ পদক এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন পদক প্রদান করেন।

সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মেরিন গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ক্যাডেটরা আজ নতুন জীবনে পদার্পণ করবে, সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। মনে রাখতে হবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

মেরিন ক্যাডেটদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রচারণ বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং, খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বটা পালন করার মতো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তোমরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবে। জাতির পিতার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় পেয়েছিলাম। কাজেই তা উন্নত করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমি'- সরকারি ৫টি ও বেসরকারি ৬টিসহ সমুদ্র-বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী, আমরা আরও চারটি মেরিন অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি। যা এ বছরেই চালু হচ্ছে। তার সরকার জাহাজ চলাচলে উচ্চতর শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি' প্রতিষ্ঠা করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন।

বিগত ১০ বছরে এই অ্যাকাডেমির শিক্ষাদান ট্র্যাডিশনাল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতিসহ অর্জিত হয়েছে নানাবিধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। অ্যাকাডেমির নটিক্যাল প্রশিক্ষণকে উন্নততর করার লক্ষ্যে, ২০১৯ সালে অ্যাকাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে 'নেভিগেশন সিমুলেটর'। পাশাপাশি, এ বছরই উন্নততর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণের স্বার্থে চলমান রয়েছে 'ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর' স্থাপনের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এই অ্যাকাডেমিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দিতে যাচ্ছি যাতে আমাদের ক্যাডেটরা দেশে এবং বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখার দিক থেকে আমরা খুব বড় না হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের জন্য বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং আর্থসামাজিক উন্নতি করা, যে চেতনা নিয়ে যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, অ্যাকাডেমির প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট দেশে ও বিদেশের সমদ্রগামী জাহাজে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছরে আয় করে আনছে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান করোনাকালেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাউদ্যাম্পটন সলেন্ট ইউনিভার্সিটির 'ওয়ারসাস স্কুল অব মেরিটাইম সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফিলিপাইনের মেরিটাইম অ্যাকাডেমি অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক'-এর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অ্যাকাডেমির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরও বৃদ্ধি পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৬৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো অ্যাকাডেমির পতেঙ্গা-প্রান্তে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ নির্মাণ, দুটি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বণ্টকের নবায়ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে ৩ বছরে একটা দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সমর্থ হন। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা না হলে, আর তিনি যদি সময় পেতেন তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে বহু আগেই মাথা উঁচু করে চলতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৫ আগস্টের কালরাত সেই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে বলেই এবং দীর্ঘদিন সরকারে থাকার সুবাদে প্রতিটা ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০৪১ এই ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অচিরেই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ 'সোনার বাংলাদেশ' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআলস্নাহ। আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ এক দেশ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মেরিন অ্যাকাডেমির লেকে দুটি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বণ্টকের (১২০ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন) নবায়ন করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে