মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী

বিক্ষোভকারীদের ওপর এবার সেনা সমর্থকদের হামলা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় একদল সেনা সমর্থক -ব্যাংকক পোস্ট

মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর এবার হামলা চালিয়েছে সেনা সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার জান্তার সমর্থকরা ছুরি, মুগুর ও গুলতি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি

গত ১ ফেব্রম্নয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই মিয়ানমারের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে আছে। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পাওয়ার পর কারচুপির অভিযোগ করে আসছিল সামরিক বাহিনী। এরপর অভু্যত্থান ঘটিয়ে সু চিসহ তার দলের অধিকাংশ নেতাকে আটক করে রেখেছে তারা।

তারপর থেকে গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন দেশটিতে সামরিক অভু্যত্থানবিরোধী প্রতিবাদ হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও ইয়াঙ্গুনে এ ধরনের একটি প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অভু্যত্থানবিরোধীদের সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সামরিক বাহিনীর প্রায় এক হাজার সমর্থক ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়। তাদের অনেকে ফটোগ্রাফারদের এবং গণমাধ্যমকর্মীদেরও হুমকি দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে নগরীর কেন্দ্রস্থলের বিভিন্ন অংশে ধাক্কাধাক্কি থেকে আরও সহিংসতা শুরু হয়। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে সামরিক বাহিনীর কিছু সমর্থকের হাতে ছুরি ও মুগুর দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই হামলাকারীদের মধ্যে কিছু লোক পাথর ও গুলতি ছুড়েছে আর একদল লোক বেশ কয়েকজনকে মারধর করেছে।

ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে, সামরিক বহিনীর বেশ কিছু সমর্থক, যাদের একজনের হাতে ছুরি ছিল, যে নগরের কেন্দ্রস্থলে একটি হোটেলের সামনে এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করছে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর ফুটপাতে পড়ে থাকা ওই ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগের কর্মীরা সাহায্য করেন, তবে তার পরবর্তী অবস্থা জানা যায়নি।

আন্দোলনকারী থিন জার শুন লেই য়ি বলেন, 'আজকের (বৃহস্পতিবার) ঘটনা দেখিয়েছে, কারা সন্ত্রাসী। গণতন্ত্রের জন্য জনগণের নেওয়া পদক্ষেপে ভীত তারা। আমরা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।'

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন-ধর্মঘটের কারণে প্রায় স্থবির হয়ে আছে মিয়ানমার। এখন এই সহিংসতা দেশটিতে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে ইয়াঙ্গুনের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। এর মাধ্যমে ভেতরে থাকা কয়েকশ শিক্ষার্থীকে বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখানো বন্ধ করে দেয় তারা। এছাড়া কথিত 'হোয়াইট কোট বিপস্নবের' অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরাও একটি প্রতিবাদ-সমাবেশের আয়োজন করেন।

প্রতিবাদ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে এবং পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহারের মতো নূ্যনতম শক্তি ব্যবহার করছে, চলতি সপ্তাহে দেশটির সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এমনটি বলেছেন বলে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তারপরও প্রতিবাদ সমাবেশগুলোকে ঘিরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত তিন বিক্ষোভকারী ও একজন পুলিশ নিহত হয়েছেন।

গত বুধবার অধিকার আন্দোলনকারী একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে, প্রতিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণে এ পর্যন্ত ৭২৮ জনকে গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা সাজা দেওয়া হয়েছে। এর আগে মিয়ানমার অর্ধ শতাব্দি ধরে সরাসরি সামরিক শাসনাধীনে ছিল। ওই সময় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল। সেই তুলনায় এবার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো অনেক সংযতভাবে প্রতিবাদ মোকাবিলা করছে।

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ

মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী

এদিকে, নিজেদের পস্নাটফর্ম থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। এর মাধ্যমে সামরিক অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে টানা বিক্ষোভের মধ্যেই অনলাইন মাধ্যমেও একটা ধাক্কা খেল দেশটির জান্তা সরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জগতের জায়ান্ট কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, 'ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো বড় পস্নাটফর্মে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির ঝুঁকি অনেক বেশি এবং সেটা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

স্থানীয় সময় বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ফেসবুক জানায়, ফেব্রম্নয়ারির ১ তারিখে অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিভিন্ন ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে নিজেদের পস্নাটফর্মে মিয়নমারের সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পায় তারা। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। অন্যদিকে, ইনস্টাগ্রামও একই বার্তা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২০ সালে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের পর ফেসবুকের মাধ্যমেই মূলত ভোটে কারচুপির অভিযোগগুলো একের পর এক সামনে এনেছিল দেশটির সামরিক বাহিনী। এর মাধ্যমে তারা মূলত অভু্যত্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করে। দেশটির অনেক মানুষ এখনো ইন্টারনেট মানে কেবল ফেসবুককেই বোঝে।

এর আগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংসতা উসকে দেওয়া এবং সাধারণ জনগণের জানমালের ক্ষতি করার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর মূল অফিসিয়াল পেজ 'তাতমাদো ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম পেজ' বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। স্থানীয়ভাবে বার্মিজ সেনাবাহিনী 'তাতমাদো' নামে পরিচিত।

দেশটিতে অভু্যত্থানবিরোধীদের বিক্ষোভ বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে জান্তা সরকার। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, এমনকি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করে দেশটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে