পাবনার তালিকাভুক্ত একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা আর নেই

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার তালিকাভুক্ত ও একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা ইন্তেকাল করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জেলার সাঁথিয়া উপজেলার তেঁথুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। ভানু নেছার নাতী শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর দশ বছর আগে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন ভানু নেছা। এরপর গত তিন বছর ধরে একেবারেই শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে এসে কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তরল খাবার ছাড়া কিছু খেতে পারতেন না। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে তেঁথুলিয়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। তার আগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভানু নেছাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। উলেস্নখ্য, নারী হয়েও দেশমাতৃকার স্বাধীকার আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের তেঁথুলিয়া গ্রামের আব্দুল প্রামাণিকের স্ত্রী ভানু নেছা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মক্তিযুদ্ধে পাবনার সাঁথিয়ায় বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোলা-বারুদ মাথায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারে বাঙ্কারে পৌঁছে দিতেন তিনি। একবার তিনি গুলিতে আহতও হয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং নিয়মিত ভাতাপ্রাপ্ত পান। ১৯৯৬ সালে পাবনায় ও ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাকে তাকে সম্মানিত করা হয়। সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ জানান, একাত্তরে নন্দনপুরে যখন পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা বাঙ্কারে ছিলাম। ওই সময় ভানু নেছা আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। আমাদের গোলা-বারুদ ফুরিয়ে গেলে আমি তাকে চিঠি লিখে সাঁথিয়া থানায় গিয়ে গোলা-বারুদ আনতে বলেছিলাম। তখন তিনি কোমরে কাপড় বেঁধে থানা থেকে গোলাবারুদ এনে আমাদের দিয়েছিলেন। নন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস জানান, মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা ছিলেন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সাঁথিয়া স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত রণাঙ্গনে ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের এই অকুতোভয় সৈনিক।