প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন আজ

নতুন স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শেখ হাসিনা
স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। নতুন এক মাইলফলক ছুঁইছুঁই। তরতর করে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ অনেক আগেই হয়ে উঠেছিল বিশ্বের রোলমডেল। এবার পেতে যাচ্ছে আরেকটি নতুন স্বীকৃতি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ সে সময় মুক্তিযুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছিল। এরপর যুদ্ধোত্তর দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর কর্মপরিকল্পনা বিশ্বাবসীকে আকৃষ্ট করেছিল। তারপর কেটে গেছে অনেক বছর। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সুদক্ষ কর্মপরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিশ্বের রোল মডেল। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের নতুন স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ছিল স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করেছে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা গত ২২ ফেব্রম্নয়ারি শুরু হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় দফা পর্যালোচনা শেষে শুক্রবার গভীররাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে এই সুখবর জানাতে আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের স্বাক্ষরে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, শনিবার বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। সেই তিন সূচক হলো মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের অগ্রগতি। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ ইউএস ডলার, বাংলাদেশ ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। এখন উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্ব চেয়েছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের মহামারির বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এ ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এ পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।