শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল-কলেজ খোলার পর স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরি

আমানুর রহমান
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

এক বছর পর দেশের স্কুল-কলেজগুলো আবার শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে। আবারও দেখা যাবে শিক্ষার্থীদের পিঠে ব্যাগ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটতে। অভিভাবকরা উচ্ছ্বাসে অপেক্ষায় থাকবেন কখন তার বাচ্চা স্কুল থেকে বের হচ্ছে। গত এক বছর এই চিরচেনা দৃশ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষায় আর প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল কখন স্কুল খোলার খবর আসবে। অবেশেষে সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামী ৩০ মার্চ। প্রি-প্রাইমারি বাদে পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ওইদিন থেকে। আপাতত ৫ম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ক্লাস দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু হবে। পরে রুটিন করে অন্য সব শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে নেওয়া হবে।

সবকিছুই যখন অনেকটাই স্বাভাবিকভাবেই চলছে, তখন দেশের স্কুল-কলেজ কেন বন্ধ রাখা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন ও খুলে দেওয়ার দাবি যেমন ছিল; তেমনি কেন আরও কয়েকটা দিন পর্যবেক্ষণ করা এবং টিকা নেওয়া শেষ হলে খুলতে অসুবিধা কোথায় এমন মতও ছিল। এরকম হাজারো প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার অবসান ঘটছে আগামী ৩০ মার্চ।

এ ব্যাপারে বিশিষ্টজন বিশেষ করে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করছেন- তারা বলছেন, সবার আগে সতর্কতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি এবং শিক্ষকদের সুরক্ষার বিষয়টিতে দৃষ্টি দিতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে। শুধু সরকারের একার ওপর দায় চাপিয়ে দিলে হবে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তড়িঘড়ি নয়, সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে। একবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যেন আবার বন্ধ করে দিতে না হয়, এশিয়ার অনেক দেশের মত। পরিস্থিতি নিয়মিতই মনিটরিং করতে হবে। খোলার আগে অবশ্যই শিক্ষকদের সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে টিকার আওতায় নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

'গণস্বাক্ষরতা অভিযানে'র চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাসহ সবার পরামর্শ হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হলে সবার আগে প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি সুনিশ্চিত করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আবার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে না হয়।

প্রথম হচ্ছে সরকার ও স্বাস্থ্য পরামর্শকদের পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত মনিটরিং ও পর্যালোচনা করতে হবে। সরকারকে জানাতে হবে তা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সুরক্ষার বিষয়টিকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের টিকার আওতায় আনতে হবে।

রাশেদা কে চৌধুরী আরও বলেন, করোনাকালে আগে যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছিল। তারা সবাই স্কুলে আসছে কি না তা মনিটরিং এবং যদি না আসে- কেন আসেনি, এখন কোথায় আছে তা খূঁজে বের করতে হবে। সর্বোপরি অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সবার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-আর-রশিদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ছোবলকে অস্বীকার করাটা সমীচীন হবে না। গত এক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আশা করছি আরও উন্নতি ঘটবে। ধীরে ধীরে উন্নতি হবে পরিস্থিতির। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমষ্টিগতভাবে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু আবেগ দিয়ে নয়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুঝতে হবে কেন এতদিন বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, আগে তো জীবন- তারপর শিক্ষা ও জীবনের সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মুক্তি। জীবন বিপন্ন করে কোনো সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের চাইতে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেক সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, এটাকে অস্বীকার করার কোনো যুক্তি নেই। তবে তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্তের ফলে কোনো একটি জীবন যদি হুমকির সম্মুখীন হয়, তার চাইতে বেদনার আর কিছুই থাকবে না। আবেগ বা তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি বুঝলে হবে না।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলছে। কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল। এটি সরকারের সদিচ্ছারই প্রতিফলন।

তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে সরকার একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এ রোডম্যাপ অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিড় এড়ানো নিশ্চিত করতে হবে। সব ক্লাস একসঙ্গে করানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পালন করাতে হবে। কেউ যাতে মাস্ক ছাড়া প্রতিষ্ঠানে না আসে এবং আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে কঠোরভাবে। একেকদিন একেকটি শ্রেণির ক্লাস করাতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে একই দিন স্কুলে এনে ভিড় করানো যাবে না। সরকারও সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে বলে দেখেছি। এখন কাজ হচ্ছে এ নির্দেশনা কতটুকু মানা হচ্ছে, তা মনিটরিং করা ও নিশ্চিত করা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮-র নিচে। আর শিশুদের টিকা তো এখনো আসেনি। তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং তা পালনের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

শিক্ষকদের টিকার জন্য নিবন্ধন ও টিকা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে। এখন যতদ্রম্নত সম্ভব শিক্ষকদের টিকা প্রদান ও টিকাগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করাতে হবে। প্রয়োজনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল সেন্টারগুলোকেও যদি টিকা সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করা যায়, তবে টিকা প্রদান ও গ্রহণ আরও দ্রম্নত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলার আগে সরকারকে অবশ্যই শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং আবাসিক হল খোলার আগে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে