প্রেসক্লাব এলাকা রণক্ষেত্র

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদলের সমাবেশ পন্ড

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের অ্যাকশন -আমিনুল ইসলাম শাহীন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃতু্যর প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত সমাবেশ শুরুর আগে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে সংগঠনটির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পুলিশের ৭/৮ সদস্যও। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। রাস্তায় প্রায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে এলাকাটি। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাব ও তার আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। তিনিও যথাসময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। সকাল ১১টায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এসে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ জানিয়ে দেয়, অনুমতি ছাড়া কোনো সমাবেশ করা যাবে না। এ সময় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরপরই সোহেল জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল গেট দিয়ে বাইরে এসে ফুটপাতে নেতাকর্মী নিয়ে সমবেত হলে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। একই সময় সংগঠনের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী বেরিয়ে সড়কে বসে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে তুলে দেয়। তারপরই এলাকায় উপস্থিত ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশের লাঠিপেটায় ছাত্রদল কর্মীরা প্রেসক্লাব চত্বরে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। সেখান থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কেউ কেউ। পরে পুলিশের একটি দল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করে লাঠিচার্জ করে এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ছুড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় পুলিশ-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রণক্ষেত্র পরিণত হয়। সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিকে ছুটতে শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই পুলিশ ২০ রাউন্ডের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ এবং বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা দফায় দফায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশও বেপরোয়া লাঠিপেটা করতে থাকে। পরে পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের রুখতে রাবার বুলেটও ছুড়তে দেখেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুরুতে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে রাজপথে অবস্থান করার চেষ্টা করলেও দ্বিতীয় দফায় তারা বিভিন্ন জায়গায় একত্র হয়ে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ আবার লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশের মারমুখী অবস্থানের মধ্যেও 'মুশতাক হত্যার বিচার চাই', 'খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমাদের সাথে' সংবলিত স্স্নোগান দিতে থাকেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবলও আহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সমাবেশ করার জন্য ছাত্রদল কোনো অনুমতি নেয়নি। তারা অনুমতি না নিয়ে প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ৪০০-৫০০ জন কর্মীসহ সড়কে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত থেকে আট সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েক জনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রদলের এ বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জলকামানের গাড়ি, আর্মড কার, প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়। প্রেসক্লাব এলাকায় প্রবেশ করতে কড়াকড়ি আরোপ করে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান মামুনসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় প্রেসক্লাবের ৫/৬ জন কর্মচারী আহত হন। সংঘর্ষে হাবিব-উন নবি খান সোহেল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহ-সভাপতি মামুন খান, সাজিদ হাসান বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সম্পাদক এজাজ শাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতা মারজুক আল আমিন, তেজগাঁও কলেজের বেলাল হোসেন, ঢাবি যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম আবু জাফর, সদস্য তরিকুল ইসলাম, জবি ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান রুমিসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। এদিকে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ লাটিচার্জ, টিয়ার সেল এবং শর্টগান ব্যবহার করে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এখন অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ হামলা থেকে আবারও প্রমাণ হলো সরকার মত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা দিতে নারাজ। তারা গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে হরণ করে নিয়েছে।